Saturday, October 9, 2010

ট্রান্সফরমার চুরি রোধে দেশীয় প্রযুক্তি

ট্রান্সফরমার চুরি রোধে দেশীয় প্রযুক্তি মনজুরুল আহসান আমাদের দেশে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা দামের ট্রান্সফরমার চুরি হয়। একেকটি ১০ কেভির বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের মূল্য ৪০ হাজার টাকারও বেশি। ট্রান্সফরমার চুরি যাওয়ার খেসারত দিতে হয় গরিব কৃষকদের। কখনো বা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বা সরকারের ঘাড়ে চাপে এর দায়ভার। এ ছাড়া নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করে পুনরায় বিদ্যুৎ পেতেও অনেক সময় লেগে যায়। ফলে সেচকাজ বিঘি্নত হওয়াসহ নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় কৃষকদের।
পত্রপত্রিকায় এই সংবাদ দেখে ট্রান্সফরমার চুরি রোধে অনুপ্রাণিত হন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের (এআইইউবি) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা। তাঁর প্রাথমিক ধারণা ছিল, এমন একটি ব্যবস্থা উদ্ভাবন করা, যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ব্যক্তি ট্রান্সফরমার খোলার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকক্ষে সতর্ক বার্তা পেঁৗছে যায়। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাতে উদ্যোগ নিয়ে ট্রান্সফরমার উদ্ধার এবং দুর্বৃত্তদের ধরার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মীদের সেখানে পাঠাতে পারে_এমন প্রযুক্তি নিয়ে তিনি গবেষণা শুরু করলেন। এ ধরনের একটি প্রযুক্তির কারিগরি উন্নয়নের জন্য তিনি শেষ বর্ষের তিন শিক্ষার্থীকে প্রজেক্ট ঠিক করে দিলেন। 'ট্রান্সফরমারের নিরাপত্তায় নিয়ন্ত্রণকক্ষে সতর্ক বার্তা পাঠানো' শিরোনামে এই প্রজেক্টে কাজ করেছেন অসীম কুমার সাহার তিন শিক্ষার্থী সিজা আফরিন, আলেয়া ফেরদৌসি এবং তানভীর আহমেদ চৌধুরী। দেশের একটি সমস্যার সমাধানে কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারগুলোর অবদানের শুরুর গল্পটা এ রকমই।
নব উদ্ভাবিত এ ব্যবস্থাটিতে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন এই গবেষকরা। একটি মোবাইল ফোন সংস্কার করে ট্রান্সফরমারের মধ্যে বিশেষভাবে বসানো হয়। এতে এমন একটি ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে কেউ ট্রান্সফরমার খুলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্ক বার্তা চলে যাবে। যতক্ষণ নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ না হবে এবং তারা উদ্যোগ না নেবে, ততক্ষণ অনবরত সতর্ক বার্তা দিতে থাকবে। এ প্রসঙ্গে প্রজেক্ট তত্ত্বাবধায়ক অসীম কুমার সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণকক্ষে অ্যালার্ম ধরনের ব্যবস্থা করা যাবে। এতে নিয়ন্ত্রণকক্ষে কর্মীদের মনিটরের দিকে না তাকিয়েও শব্দ শুনে বুঝবেন কোথাও ট্রান্সফরমার খুলে ফেলা হচ্ছে।'
গবেষণার সফলতার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে এআইইউবির তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুর রহিম মোল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একাধিকবার গবেষণাগারে পরীক্ষা করে তা কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।' এ উদ্ভাবনের সম্ভাবনার দিক তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর ট্রান্সফরমারে এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে বছরে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি ভোক্তাদের ভোগান্তিও কমবে।'
প্রজেক্টের অন্যতম গবেষক তানভীর আহমেদ জানান, প্রথম সফল এ রকম একটি ব্যবস্থা প্রস্তুত করতে সাকল্যে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৮৬৬ টাকা। বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন শুরু করলে এই ব্যয় এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় নেমে আসবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রযুক্তিটির উদ্ভাবক এবং সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, যে সমস্যা সমাধানের জন্য এই সফল গবেষণার উদ্যোগ, সেখানে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে দ্রুত সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন।
নব উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তির বিষয়টি জানানো হলে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানির প্রকৌশল বিভাগের পরিচালক প্রকৌশলী সিরাজদ্দৌলা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রজেক্টটি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যদি সফল প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এটা সেখানে ব্যবহার করতে পারলে চুরি প্রতিরোধ করা যাবে।' এই প্রযুক্তিটির আরো উন্নয়ন কার্যকর করার জন্য পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নিজেদেরই এগিয়ে আসা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের প্রকৌশল বিভাগের সদস্য প্রকৌশলী আব্দুল মোমেন তরুণদের এই উদ্ভাবনের সংবাদ শুনে প্রযুক্তিটি নিরীক্ষার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দেশেই এ ধরনের উদ্ভাবন নিজস্ব সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
Source: Daily Kalerkantho, 08-10-10

No comments:

Post a Comment