আই আর-৬৪ সাব ১ : স্বল্পমেয়াদি ও বন্যাসহিষ্ণু ধান
কৃষকের প্রদর্শনী মাঠে শুরু হয়েছে আই আর-৬৪ সাব ১ ধান কাটা। ৩০ দিন বয়সের চারা রোপণের মাত্র ৯০ দিনের মধ্যেই এই ধান কৃষক কাটতে পারছেন এবং হেক্টরপ্রতি ৪.৫ টন ফলন ঘরে তুলতে পারছেন। এতে তারা একদিকে যেমন স্বল্পমেয়াদি ধান হিসেবে আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গার সময়ে ধান কাটতে পারছেন, অন্যদিকে এই ধানের জাত বন্যাসহিষ্ণু হওয়ায় বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উত্তরাঞ্চলে যেখানে বন্যায় প্রতি বছর ৪০ থেকে ৫০ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হচ্ছে, সেখানে আইআর-৬৪ সাব ১ জাতের ধান চাষ করে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নাবী বন্যার হাত থেকে কৃষক রক্ষা করতে পারছে। পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি ধান হওয়ার কারণে আশ্বিন-কার্তিক মাসে এই ধান কেটে উত্তরাঞ্চলের কৃষক এবং কৃষি শ্রমিক মঙ্গার অভিশাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। সেই সাথে সঠিক সময়ে অর্থাৎ কার্তিক মাসের শেষেই কৃষকরা একই জমিতে আমন ধান কাটার পর আলু, সরিষাসহ ইত্যাদি রবি ফসল করতে পারছেন এবং বেশি ফলন ও আয় নিশ্চিত করছেন।
সম্ভবত আই আর-৬৪ সাব ১ জাতটিই এখন পর্যন্ত একমাত্র উদ্ভাবিত ধানের জাত, যে জাতটিতে স্বল্পমেয়াদি এবং বন্যাসহিষ্ণু এই দু'টি গুণই বিদ্যমান। মঙ্গা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের কার্যকারিতা এই মুহূর্তে একটি প্রমাণিত প্রযুক্তি। আরডিআরএস ২০০৪ সাল থেকে গবেষণা কার্যক্রম এবং ২০০৫ সাল থেকে কৃষকের মাঠে এই গবেষণার ফলাফল বাস্তবায়ন করে মঙ্গা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি ধানের প্রযুক্তি ব্যাপক সমপ্রসারণের কাজ করছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কতর্ৃক ১৯৯৭ সালে উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৩৩, বাংলাদেশ আনবিক গবেষণা ইনস্টিটিউট কতর্ৃক ২০০৭ সনে উদ্ভাবিত বিনা ধান ৭ এবং বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২০০৮ সালে উদ্ভাবিত বি ইউ ধান ১ জাতের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে আরডিআরএস, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরসহ বেশ কিছু সংস্থা মঙ্গা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
আই আর-৬৪ ইরি কতর্ৃক উদ্ভাবিত একটি স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত, যা আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী। বিভিন্ন প্রদর্শনী মাঠে দেখা গেছে, অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি ধানের মতই আই আর-৬৪ জাতের ধান ১২০-১২৪ দিনের মধ্যেই কাটা যায় এবং ফলন অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি ধানের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফলিত গবেষণা বিভাগ এবং আরডিআরএস কর্তৃক যৌথভাবে বাস্তবায়িত বিভিন্ন সময়ে প্রদর্শনীর ফলাফলেও আই আর-৬৪ ধানের ফলন হেক্টরে ৪.৫ টনের মত পাওয়া গেছে, যা স্বল্পমেয়াদি ধান হিসেবে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
ইরির এই জনপ্রিয় স্বল্পমেয়াদি ধানের জাতে সাব-১ জিন সংমিশ্রণ করার ফলে আই আর-৬৪ সাব ১ ধান গাছ এখন বন্যাসহিষ্ণুতা অর্জন করেছে। অর্থাৎ এই জাতের ধান গাছ বন্যার পানিতে ১৫ দিন পর্যন্ত ডুবে থাকলেও মরে যায় না। ২০০৯ সালে বিল ও মেলিন্ডা গেটস প্রকল্পের আওতায় আরডিআরএস এই জাতের ধান কৃষকের মাঠে সমপ্রসারণকালে দেখতে পায়, বন্যার পানিতে ১৫ দিন পর্যন্ত ডুবে থাকার পরেও কোনো ক্ষতি হয়নি।
বীজ বপনের দিন থেকে ফুল আসা পর্যন্ত সময় লাগে ৯০ থেকে ৯৫ দিন; বীজ বপনের দিন থেকে ধান পাকা পর্যন্ত সময় লাগে ১২০-১২৪ দিন; ধান গাছের উচ্চতা হয় ৯০ থেকে ৯৫ সে.মি. ধানে এমাইলোজের পরিমাণ থাকে ২২ ভাগ। আই আর ৬৪-সাব ১ ধানের চারা রোপণ করে দেখা গেছে, এই জাতটি যদি ৫ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে, তাহলে জাতটি হেক্টরে ৪.৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। যদি জাতটি ৬-১০ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে, তাহলে ৪ টনের মত ফলন দিতে পারে। যদি ১১-১৪ দিন পর্যন্ত এই জাতটি সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে তাহলে জাতটি ৩.৫ টন ফলন দিতে সক্ষম। এ ছাড়াও দেখা গেছে, ১৫-১৭ দিন পর্যন্ত যদি এই জাতটি পানির নিচে থাকে, তাহলে ৩ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেখা গেছে প্রায় প্রতি বছরই আশ্বিন-কার্তিক মাসে প্রচণ্ড খরা হয়। এই সময়ে ধান গাছে কাঁচথোর বের হয়। তখন জমিতে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা না থাকলে ধান চিটা হয়ে যায়। কিন্তু আই আর-৬৪ সাব ১ ধান স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় ভাদ্র মাসের শেষেই এই ধান গাছে কাঁচথোর বের হয়। ভাদ্র মাসের শেষে জমিতে প্রয়োজনীয় আদর্্রতা থাকে বিধায় চিটার পরিমাণও এই ধানে কম হয়। তাই আশ্বিন-কার্তিক মাসে খরা হলেও এই ধান গাছের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না, বরং সেই সময়ে বৃষ্টি না হলে এই ধান গাছের জন্য ভাল। কারণ এই সময় এই জাতের ধান পাকার সময়।
তবে এ ধানের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়ে গেছে যেমন- বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেও জমিতে যদি প্রচুর পানি আটকে থাকে এবং ১৫ দিনের বেশি যদি ধান গাছ পানির নিচে থাকে, তাহলে ইপ্সিত ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। যদি বন্যার পানি কর্দমাক্ত হয়, সেক্ষেত্রেও ভাল ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। ধান গাছে ফুল আসার পর যদি বন্যার পানিতে ডুবে যায়, তাহলে ফলন পাওয়া যাবে না। পানির তাপমাত্রা যদি বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে ফলন কমে যেতে পারে।
প্রতি বছরই আশ্বিন-কার্তিক মাসে খরা হলে ধানের জমিতে প্রচুর পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়। এই পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে ধান গাছকে রক্ষা করতে কৃষককে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। যেহেতু আই আর-৬৪ সাব ১ কার্তিক মাসেই পেকে যায়, তাই পোকা-মাকড় এই ধান গাছকে তেমন ক্ষতি করার সুযোগ পায় না।
আই আর ৬৪-সাব ১ ধান চাষে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে সেগুলো হল- ১. ২৫-৩০ দিন বয়স্ক চারা লাগাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বেশি বয়সের চারা লাগানো যাবে না; ২. ৬ ইঞ্চি ী ৬ ইঞ্চি দূরত্বে চারা লাগাতে হবে। এর চেয়ে বেশি দূরত্বে চারা লাগালে গড় ফলন কমে যেতে পারে; ৩. চারা লাগানোর ৪০ দিনের মধ্যে সমস্ত ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ শেষ করতে হবে।
উত্তরাঞ্চলে আই আর ৬৪-সাব ১ ধানের উপযোগিতা:
১. স্বল্পমেয়াদি ধান বিধায় আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গার সময়ে কাটা যায়; ২. বন্যাসহিষ্ণু হওয়ায় বন্যায় ১৫ দিন পর্যন্ত ধান গাছ ডুবে গেলেও মরে না, এবং কাংখিত ফলন দেয়; ৩.স্বল্পমেয়াদি হওয়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরাজনিত ক্ষতি থেকে ধান গাছ রক্ষা পায়; ৪. আশ্বিন-কার্তিক মাসে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব হওয়ার আগেই এই ধান কাঁটা যায়; ৫. আশ্বিন-কার্তিক মাসের খরার সময় এই জাতের ধান চাষে সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হয় না, বরং ওই সময়ে খরা হলে ধান সময়মত পাকে।
ধান মাঝারী চিকন হওয়ার কারণে এই ধানের বাজারমূল্য বেশি, স্বল্পমেয়াদি হওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ কম, বন্যাসহিষ্ণু হওয়ায় এবং খরা হওয়ার আগেই ধান পেকে যাওয়ায় ঝুঁকিবিহীনভাবে এই ধান উৎপাদন সম্ভব, আশ্বিন-কার্তিক মাসেই এই ধান পাকে বিধায় ওই সময়ে গো-খাদ্যের জন্য খড়ের তীব্র অভাব দূর করা সম্ভব হয় ।
সম্ভবত আই আর-৬৪ সাব ১ জাতটিই এখন পর্যন্ত একমাত্র উদ্ভাবিত ধানের জাত, যে জাতটিতে স্বল্পমেয়াদি এবং বন্যাসহিষ্ণু এই দু'টি গুণই বিদ্যমান। মঙ্গা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি আমন ধানের কার্যকারিতা এই মুহূর্তে একটি প্রমাণিত প্রযুক্তি। আরডিআরএস ২০০৪ সাল থেকে গবেষণা কার্যক্রম এবং ২০০৫ সাল থেকে কৃষকের মাঠে এই গবেষণার ফলাফল বাস্তবায়ন করে মঙ্গা নিরসনে স্বল্পমেয়াদি ধানের প্রযুক্তি ব্যাপক সমপ্রসারণের কাজ করছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কতর্ৃক ১৯৯৭ সালে উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৩৩, বাংলাদেশ আনবিক গবেষণা ইনস্টিটিউট কতর্ৃক ২০০৭ সনে উদ্ভাবিত বিনা ধান ৭ এবং বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২০০৮ সালে উদ্ভাবিত বি ইউ ধান ১ জাতের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে আরডিআরএস, কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরসহ বেশ কিছু সংস্থা মঙ্গা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
আই আর-৬৪ ইরি কতর্ৃক উদ্ভাবিত একটি স্বল্পমেয়াদি ধানের জাত, যা আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী। বিভিন্ন প্রদর্শনী মাঠে দেখা গেছে, অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি ধানের মতই আই আর-৬৪ জাতের ধান ১২০-১২৪ দিনের মধ্যেই কাটা যায় এবং ফলন অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি ধানের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফলিত গবেষণা বিভাগ এবং আরডিআরএস কর্তৃক যৌথভাবে বাস্তবায়িত বিভিন্ন সময়ে প্রদর্শনীর ফলাফলেও আই আর-৬৪ ধানের ফলন হেক্টরে ৪.৫ টনের মত পাওয়া গেছে, যা স্বল্পমেয়াদি ধান হিসেবে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।
ইরির এই জনপ্রিয় স্বল্পমেয়াদি ধানের জাতে সাব-১ জিন সংমিশ্রণ করার ফলে আই আর-৬৪ সাব ১ ধান গাছ এখন বন্যাসহিষ্ণুতা অর্জন করেছে। অর্থাৎ এই জাতের ধান গাছ বন্যার পানিতে ১৫ দিন পর্যন্ত ডুবে থাকলেও মরে যায় না। ২০০৯ সালে বিল ও মেলিন্ডা গেটস প্রকল্পের আওতায় আরডিআরএস এই জাতের ধান কৃষকের মাঠে সমপ্রসারণকালে দেখতে পায়, বন্যার পানিতে ১৫ দিন পর্যন্ত ডুবে থাকার পরেও কোনো ক্ষতি হয়নি।
বীজ বপনের দিন থেকে ফুল আসা পর্যন্ত সময় লাগে ৯০ থেকে ৯৫ দিন; বীজ বপনের দিন থেকে ধান পাকা পর্যন্ত সময় লাগে ১২০-১২৪ দিন; ধান গাছের উচ্চতা হয় ৯০ থেকে ৯৫ সে.মি. ধানে এমাইলোজের পরিমাণ থাকে ২২ ভাগ। আই আর ৬৪-সাব ১ ধানের চারা রোপণ করে দেখা গেছে, এই জাতটি যদি ৫ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে, তাহলে জাতটি হেক্টরে ৪.৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে। যদি জাতটি ৬-১০ দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে, তাহলে ৪ টনের মত ফলন দিতে পারে। যদি ১১-১৪ দিন পর্যন্ত এই জাতটি সম্পূর্ণ পানির নিচে ডুবে থাকে তাহলে জাতটি ৩.৫ টন ফলন দিতে সক্ষম। এ ছাড়াও দেখা গেছে, ১৫-১৭ দিন পর্যন্ত যদি এই জাতটি পানির নিচে থাকে, তাহলে ৩ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে দেখা গেছে প্রায় প্রতি বছরই আশ্বিন-কার্তিক মাসে প্রচণ্ড খরা হয়। এই সময়ে ধান গাছে কাঁচথোর বের হয়। তখন জমিতে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা না থাকলে ধান চিটা হয়ে যায়। কিন্তু আই আর-৬৪ সাব ১ ধান স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় ভাদ্র মাসের শেষেই এই ধান গাছে কাঁচথোর বের হয়। ভাদ্র মাসের শেষে জমিতে প্রয়োজনীয় আদর্্রতা থাকে বিধায় চিটার পরিমাণও এই ধানে কম হয়। তাই আশ্বিন-কার্তিক মাসে খরা হলেও এই ধান গাছের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না, বরং সেই সময়ে বৃষ্টি না হলে এই ধান গাছের জন্য ভাল। কারণ এই সময় এই জাতের ধান পাকার সময়।
তবে এ ধানের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়ে গেছে যেমন- বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেও জমিতে যদি প্রচুর পানি আটকে থাকে এবং ১৫ দিনের বেশি যদি ধান গাছ পানির নিচে থাকে, তাহলে ইপ্সিত ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। যদি বন্যার পানি কর্দমাক্ত হয়, সেক্ষেত্রেও ভাল ফলাফল নাও পাওয়া যেতে পারে। ধান গাছে ফুল আসার পর যদি বন্যার পানিতে ডুবে যায়, তাহলে ফলন পাওয়া যাবে না। পানির তাপমাত্রা যদি বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে ফলন কমে যেতে পারে।
প্রতি বছরই আশ্বিন-কার্তিক মাসে খরা হলে ধানের জমিতে প্রচুর পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়। এই পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে ধান গাছকে রক্ষা করতে কৃষককে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। যেহেতু আই আর-৬৪ সাব ১ কার্তিক মাসেই পেকে যায়, তাই পোকা-মাকড় এই ধান গাছকে তেমন ক্ষতি করার সুযোগ পায় না।
আই আর ৬৪-সাব ১ ধান চাষে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে সেগুলো হল- ১. ২৫-৩০ দিন বয়স্ক চারা লাগাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বেশি বয়সের চারা লাগানো যাবে না; ২. ৬ ইঞ্চি ী ৬ ইঞ্চি দূরত্বে চারা লাগাতে হবে। এর চেয়ে বেশি দূরত্বে চারা লাগালে গড় ফলন কমে যেতে পারে; ৩. চারা লাগানোর ৪০ দিনের মধ্যে সমস্ত ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ শেষ করতে হবে।
উত্তরাঞ্চলে আই আর ৬৪-সাব ১ ধানের উপযোগিতা:
১. স্বল্পমেয়াদি ধান বিধায় আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গার সময়ে কাটা যায়; ২. বন্যাসহিষ্ণু হওয়ায় বন্যায় ১৫ দিন পর্যন্ত ধান গাছ ডুবে গেলেও মরে না, এবং কাংখিত ফলন দেয়; ৩.স্বল্পমেয়াদি হওয়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরাজনিত ক্ষতি থেকে ধান গাছ রক্ষা পায়; ৪. আশ্বিন-কার্তিক মাসে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব হওয়ার আগেই এই ধান কাঁটা যায়; ৫. আশ্বিন-কার্তিক মাসের খরার সময় এই জাতের ধান চাষে সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হয় না, বরং ওই সময়ে খরা হলে ধান সময়মত পাকে।
ধান মাঝারী চিকন হওয়ার কারণে এই ধানের বাজারমূল্য বেশি, স্বল্পমেয়াদি হওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ কম, বন্যাসহিষ্ণু হওয়ায় এবং খরা হওয়ার আগেই ধান পেকে যাওয়ায় ঝুঁকিবিহীনভাবে এই ধান উৎপাদন সম্ভব, আশ্বিন-কার্তিক মাসেই এই ধান পাকে বিধায় ওই সময়ে গো-খাদ্যের জন্য খড়ের তীব্র অভাব দূর করা সম্ভব হয় ।
ড. এম জি নিয়োগী, হেড অফ এগ্রিকালচার
Daily Ittefaq, 24-10-10
No comments:
Post a Comment