Monday, October 25, 2010

ফার্নিচার রফতানি: সংকট ও সম্ভাবনা

ফার্নিচার রফতানি: সংকট ও সম্ভাবনা

১৮ হাজার কোটি টাকার ফার্নিচার বাজার

প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা

দেশিয় চাহিদা পূরণ করে বিশ্ব বাজারে ফার্নিচার শিল্পের রফতানি বাড়ছে। বিশ্বে আসবাব পত্র শিল্পের বাজার প্রায় ১৮ হাজার কোটি ডলার। বাংলাদেশ ঐ হিসাবে বছরে ২ কোটি ডলারের আসবাব পত্র বিদেশে রফতানি করছে। একই সঙ্গে এই শিল্প থেকে অভ্যন্তরীণ চার হাজার কোটি টাকা বাজারের চাহিদা পূরণ করছে। উদ্যোক্তারা বলছেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এ শিল্প পরিকল্পনা মাফিক গড়ে উঠলে বছরে কয়েকগুন রফতানি আরও বৃদ্ধি পাবে। ঘরের সৌন্দর্য্য ও শোভাবর্ধনের চেয়ে প্রয়োজনের তাগিদেই বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের আসবাব পত্রের চাহিদা বেড়েছে। দেশের তৈরি এসব আসবাব পত্র সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। রফতানি খাতে এ শিল্পের আয়ের পরিমান বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমশ বাড়ছে। এ খাতের বর্তমান প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ। উদ্যোক্তারা মনে করেন জিডিপিতে এ খাতের অবদান দশমিক ২৯ শতাংশ। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে প্রতি বছর বাড়ছে এ খাতের অবদান। দেশের অভ্যন্তরীণ ফার্নিচারের যোগান দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রফতানি বাজারে সুনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পালস্না দিয়ে চলছে। সারাদেশে প্রায় ৪১ হাজার ৫৬০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ শিল্পে সরাসরি জড়িত আছে প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক। রফতানি ও অভ্যন্তরীণ চাহিদার ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে অটবি, আকতার ফার্নিশার্স, নাভানা, হাতিল, পারটেক্সসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। সংশিস্নষ্টরা বলছেন, রফতানি বাজার সম্প্রসারণ করতে সরকারের সুষ্ঠু সহযোগিতা থাকতে হবে। সরকারের সহযোগিতা পেলে আন্তর্জাতিক মানের ফার্নিচার তৈরি করে দেশের এ শিল্প অনেক দুর এগিয়ে যেতে পারবে।

ফার্নিচারের বিশ্ব বাণিজ্য

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার(আইটিসি) এর তথ্য মতে, ২০০৬ সালে বিশ্বে আসবাব পত্র বেচাকেনা হয়েছে ১৩ হাজার ৮শ কোটি মার্কিন ডলারের। ২০০৭ সালে সারা বিশ্বে আসবাব পত্র বিক্রি হয় ১৬ হাজার ২শ কোটি মার্কিন ডলারের। ২০০৮ সালে এ বাণিজ্যের পরিমান দাঁড়ায় ১৮ হাজার মার্কিন ডলারের।

ফার্নিচার রফতানি

রফতানি উন্নয়ন বু্যরোর হিসাব মতে, ২০০৯-১০ অর্থ বছরে বিদেশে ফার্নিচার রফতানি হয়েছে এক কোটি ৯২ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১০-১১ অর্থ বছরের ফানির্চার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলারের। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে বিদেশে ফানির্চার রফতানি হয়েছে ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে বিদেশে বাংলাদেশের ফার্নিচার রফতানি হয়েছে ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের। ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে ফার্নিচার রফতানি হয় ২৪ লাখ ডলার। ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে ১৮ লাখ এবং ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে ফার্নিচার রফতানি হয়েছে ২২ লাখ ডলারের।

যেসব দেশে রফতানি হচ্ছে

বাংলাদেশের ফার্নিচার বর্তমান অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচেছ। চীন, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে কাঠ ও আসবাব পত্র আমদানি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে মালয়েশিয়া থেকে ২৬ কোটি টাকার কাঠ ও আসবাব পত্র আমদানি করা হয়। সিঙ্গাপুর থেকে ৮৩ কোটি টাকার কাঠ ও আসবাব পত্র আমদানি করা হয়।

ফার্নিচারের একাল সেকাল

এক সময় ফার্নিচার তৈরি হতো শুধু কাঠ দিয়ে। ঐ সময় খুব অল্পসংখ্যক ফার্নিচার তৈরি হতো। যা ছিল আকারে বেশ বড় এবং ভারি। ফার্নিচারের ব্যাপক চাহিদা বনের উপর প্রভাব ফেলে। বনের কাঠ এক সময় উজাড় হতে থাকে। ধীরে ধীরে ফার্নিচার শিল্পে লাগে আধুনিকতার ছোঁয়া। পরিবেশ বিজ্ঞানিদের অনুরোধে কাঠের পরিবর্তে ব্যবহার শুরু হল বিকল্প কাঠ। এছাড়া স্টীনলেস স্টীল, মিন্টস্টীল ও পস্নাস্টিক দিয়ে তৈরি হলো ফার্নিচার।

বাংলাদেশে আধুনিক ফানির্চারের যাত্রা

উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশে ফার্নিচার শিল্পে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বর্তমানে বিশ্বমানের বেশ কিছু ফার্নিচারের প্রতিষ্টান গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আসবাব পত্র দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চার হাজার কোটি টাকার মার্কেট দখল করে আছে।

অটবি

বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্পের আধুনিকতার পথিকৃত অটবি। ১৯৭৫ সালে দেশবরেণ্য শিল্পী নিতুন কুন্ডের হাতে গড়ে উঠা এই প্রতিষ্ঠান। তার একান্তিক চেষ্টা আর শৈল্পিক ছোয়ায় ফার্নিচার জগতে এসেছে নতুনত্ব। গত ৩৪ বছরে অটবি এ দেশের মানুষকে দিয়েছে নিত্যনতুন ডিজাইনের ফার্নিচার। এছাড়াও তাদের রয়েছে বিক্রয়োত্তর সেবা।

নাভানা ফার্নিচার

প্রায় ১১ বছর ধরে নাভানা গ্রুপ ফানির্চার শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বিশ্বমানের আধুনিক ফানির্চার মানুষের ঘরে পৌছে দেয়া হচ্ছে তাদের লক্ষ্য। অটবির মতো নাভানাও বিদেশে ফার্নিচার রফতানি করছে।

পারটেক্স

পারটেক্স ফার্নিচারের যাত্রা শুরু ১৯৯৯ সাল থেকে। ফার্নিচার তৈরির জন্য পারটেক্স একটু ব্যতিক্রম। কারণ পারটেক্সের কাঁচামাল নিজেরাই তৈরি করে থাকে। পারটেক্স বাংলাদেশের সর্ববৃহত্তম কাঠের বিকল্প বোর্ড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্টান।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠান

ঢাকা মহানগরীতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অনেক প্রতিষ্টান ফার্নিচার আমদানি করেও বিক্রি করছে। তবে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে।

ফার্নিচার শিল্পকে এগিয়ে নিতে দরকার সরকারের সহযোগিতা। সরকারের সহযোগিতা ছাড়াই এ শিল্প এগিয়ে এসেছে। এ শিল্প বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদার ৮০ ভাগ পূরণ করছে। কিন্তু এ খাতের কাঁচামাল আমদানি করতে ৩০ শতাংশের বেশি মূল্য সংযোজন করা হয়। এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের মতে, ফানির্চার শিল্পের জন্য আলাদা জোন ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য একটি ইন্সটিটিউট করা দরকার।
SOURCE: DAILY ITTEFAQ

No comments:

Post a Comment