| ||
কোলাজ জ্যাকেটের সঙ্গে পাতিয়ালার ফিউশন, রেড কার্পেট গাউনে মিশে যায় শাড়ির সৌন্দর্য। ফ্যাশন | ||
রঙে রঙে ছন্দে ছন্দে ছুঁচ-সুতোর ফোঁড় দিয়ে দিয়ে তিনি পোশাক-আশাকের উপর এঁকে চলেন সারা ভারতের মেঠো রূপকথা। ফুলে ফুলে সাজানো কাশ্মীর থেকে মরুময় রাজস্থান থেকে সবুজ বাংলা থেকে পার্বত্য মণিপুরের লোকশিল্পকে ‘হাই প্রোফাইল’ ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের চিন্তাভাবনায়। এমব্রয়ডারিতেই মন প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন তিরিশ পেরনো তরুণ ডিজাইনার অর্ণব সেনগুপ্ত। রঙের প্যালেট, আর ছুঁচসুতোর প্রতি তাঁর ভালবাসা আশৈশব। নিজের দিদাকে দেখতেন সারা দুপুর বসে, কেমন করে তিনি কাঁথা স্টিচ দিয়ে অপূর্ব নকশা তোলেন। সেই তখন থেকেই অর্ণবের শিল্পী সত্তার উন্মোচন।
| ||
| ||
জ্যাকেটের পকেটেও শিল্পের ছোঁয়া স্নিগ্ধ আর্থ কালারে ‘ক্লাসি’ লুক শর্ট জ্যাকেটও বানিয়েছেন এই রেঞ্জে অর্ণব। মটকার কাপড়ে তৈরি ঘিয়ে রঙের জ্যাকেটে বাহার খুলেছে আড়ি নকশায় আর ভিক্টোরিয়ান হাই কলারে। শরীরে আঁটা বা বডি হাগিং পোশাকটির ওয়েস্ট পকেট তৈরি হয়েছে সুতি-সিল্ক দিয়ে। জ্যাকেটের ভেতরে সাটিনের লাইনিং। “শর্ট জ্যাকেটের নীচে প্যান্ট পরাই যায়, কিন্তু পাতিয়ালা পরলে পুরো পোশাকটা অন্য মাত্রা পাবে। জ্যাকেটের সঙ্গে পাতিয়ালায় বেশি ঘের থাকলে ভাল দেখায়। পাতিয়ালার জন্য কাপড় লাগবে অবশ্যই চার মিটার।’’ নানা ধরনের খাদি কাপড় দিয়ে রংচঙা জ্যাকেট তৈরি হতে পারে। ঐতিহ্যবাহী দেশি পোশাক শাড়ি, লেহেঙ্গার পাশাপাশি ওয়েস্টার্ন আউটফিটের একটা বাজার তৈরির চেষ্টা করছেন নাম করা ডিজাইনারেরা। অর্ণবও পশ্চিমি পোশাক বানাচ্ছেন। তবে ওয়েস্টার্ন আউটফিটে খাঁটি দেশি ফ্যাশনের মিশেল ঘটিয়ে বানিয়ে চলেছেন এক সে বঢ়কর এক পোশাক।
অস্কারের রেড কার্পেটে হলিউডের নায়িকা মাটিতে লুটিয়ে থাকা দীর্ঘ গাউন পরে যখন হাঁটেন, মনে হয় ও পোশাক নায়িকাদের গ্ল্যামারের সঙ্গেই বুঝি মানায়। “কিন্তু একটু উলটে পালটে নিলে গাউন হয়ে উঠতে পারে ভারতীয় মেয়েদের উৎসব-অনুষ্ঠানে যাওয়ার পোশাক। ভারতীয় মেয়েদের শরীরের গড়নের কথা ভেবেই গাউনে এনেছি শাড়ির মতো কুঁচি দেওয়ার স্টাইল। এতে গাউন সামলানো দায় মনে হবে না। এমন গাউন পরে পরিদের মতো উড়ে যাওয়া যায়।”
এমন একটি গাউন যার কাটিং এবং কুঁচি দেওয়ার কায়দায় রয়েছে সবরমতী স্টাইল। গুজরাত বা রাজস্থানের মেয়েরা যেমন সামনে আঁচল দিয়ে শাড়ি পরেন সেই ভাবেই দেওয়া হয়েছে গাউনের কুঁচি ও সেলাই। গাউনের বোতাম রয়েছে চোখের আড়ালে বাহুর নিচে, কোমরের উপরিভাগে ওভারল্যাপ করা কাপড়ের ভেতর। মনে হবে আর যে কোনও পোশাকের মতো ‘ইজি টু ওয়্যার’। এক বার গলিয়ে নিলেই হল। অর্ণব বললেন, “গাউনের কাপড়টি হল পশমিনা কট্ন। একটু খসখসে রাফ টেক্সচারের পশমিনা কটন কাশ্মীর এম্পোরিয়ামে গেলেই পাওয়া যাবে।” পশমিনা গাউনটি ম্যানিকুইনের গায়ে জড়িয়ে সরু-মোটা তুলির আঁচড় দিয়েছেন নানা রঙে তিনি।
অর্ণব দেখালেন আরও একটি গাউন যেখানে সেলাই আর কুঁচি পড়েছে বাংলার আটপৌরে শাড়ি পরার কায়দা মেনে। শ্যাওলা সবুজ আটপৌরে গাউনটির বুকের কাছে জারদৌজির কাজ। তার নীচ থেকে পা অবধি নেমে এসেছে হাতে আঁকা ফুলের ছবি। “ভারতীয় মেয়েদের এই ধরনের গাউনের কাটিংয়েই ভাল মানাবে বলে মনে হয়েছে আমার। সাবেকি গাউনের রীত রেওয়াজ তাই ভেঙে দিলাম। পশমিনা কটনের বদলে অবশ্য শিফন বা জর্জেটেও হতে পারে শাড়ি স্টাইলে গাউন।” | ||
| ||
নেটের শাড়িতে ফুলের বাগান মিহি নেটের ভেতর দিয়ে ছুঁচ ফুটিয়ে এমব্রয়ডারি করা! কী কঠিন কাজ! অর্ণব মেলে ধরলেন হালকা রঙের চার পাঁচ রকম ডিজাইনের নেটের শাড়ি। “নেটের ওপর কাশ্মীরি শালে যে ধরনের ফুলের নকশা থাকে সেই রকম ফুলের বোকে সেলাই করিয়েছি। জমাটি সুতোর ঘন কাজ নানা রঙের ফুলের বাগান শাড়ির পাড়ে। দেখে মনে হবে যেন বাগান চলেছে পায়ে পায়ে।” নেটের শাড়ি নিজেই হাতে ইচ্ছে করলে শৌখিন নেটের কাপড় কিনে ডিজাইনারের কাছে না গিয়ে ভাল এমব্রয়ডারি জানা শিল্পীকে দিয়েও সেলাই করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। নিউ মার্কেটে এবং যে কোনও বড় ফ্যাব্রিকের দোকানে পাওয়া যায় সিল্ক নেট। সাড়ে চারশো টাকা মিটার। ভিসকোজ নেটের দাম কিছু কম। নব্বই টাকা মিটার। তাতেও ফুলেল নকশা ভাল ফোটে।
কলকাতার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি বা নিফ্ট থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পাশ করে অর্ণব বেশ কিছু দিন বাংলাদেশে ডিজাইনিং নিয়ে শিক্ষকতা করেছিলেন। দেশে ফিরে নাগা বস্ত্র দিয়ে তৈরি করেছিলেন ক্যাজুয়্যালওয়্যার। এর পর ধীরে ধীরে নিজেই ওয়ার্কশপ খুলে কাজে নামা। প্রায় ৩০০ কারিগর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে অর্ণবের ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে সাহায্য করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বললেন, “ইউরোপে ‘ফ্যাশন ফর অল’ ধারণাটা ইতিমধ্যে চালু হয়ে গেছে। এক্সক্লুসিভ শো রুম ছাড়িয়ে শপিং কমপ্লেক্সের খুচরো বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই আমার নিজস্ব ডিজাইনের জামাকাপড়, শাড়ি। এটা যদি করতে পারি তবেই ডিজাইনার হিসেবে আমার সাফল্য।” Source: Daily Anandabazar |
-
No comments:
Post a Comment