Tuesday, October 19, 2010

ডাল ও তেলজাতীয় শস্যের ফলনে বিপ্লব ঘটাতে পারে জীবাণু সার

ডাল ও তেলজাতীয় শস্যের ফলনে বিপ্লব ঘটাতে পারে জীবাণু সার

বাকৃবি প্রতিনিধি
কৃষিনির্ভর এই দেশে কৃষির উন্নয়নের ওপর নির্ভর করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন। আর কৃষি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তির যথোপযুক্ত ও দক্ষ ব্যবহার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা পূরণে সীমিতসংখ্যক জমিতে উত্পাদন বাড়াতে জমিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, যা মাটির উর্বরাশক্তি কমিয়ে দেয় ও পরিবেশ দূষণ করে। ফলে দিনদিন আবাদি জমি হারিয়ে ফেলছে তার নিজস্ব উর্বরাশক্তি। এছাড়াও পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত সার ব্যবহারে ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি ফসলের পুষ্টিগুণও নষ্ট হয়। উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ফলনের জন্য বেশ কয়েকটি খাদ্য উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় নাইট্রোজেনের। এই নাইট্রোজেনের উত্স হলো ইউরিয়া সার। কিন্তু অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহারে জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট হয়। ইউরিয়া সারের বিকল্প হিসেবে জীবাণু সার, যা কার্যকর এবং মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ও ফসলের উত্পাদন বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের অভিমত। জীবাণু সার হচ্ছে এক ধরনের সার, যার ভেতর প্রচুর বাছাইকৃত জীবন্ত অণুজীব অবস্থান করে। তিন ধরনের জীবাণু সার পাওয়া যায়। যেমন—নাইট্রোজেন বন্ধনকারী জীবাণু সার, ফসফরাস দ্রবীভূতকারী জীবাণু সার এবং আবর্জনা ও কম্পোস্ট থেকে গাছের খাদ্য সরবরাহকারী জীবাণু সার। বিভিন্ন ফসলের জন্য এ সার বিভিন্ন রকম। ডাল ও তেলজাতীয় (যথা—মুগ, মসুর, মাস, ছোলা, সয়াবিন, চীনাবাদাম ও বরবটি) ফসলের জন্য জীবাণু সার ইউরিয়া সার অপেক্ষা একদিকে যেমন জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, তেমনি ফসলের ফলন ও গুণগত মান বাড়ায়। এছাড়া এ সার ব্যবহারে খরচ কম এবং তা দামে সস্তা ও পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছে জীবাণু সার ব্যাবহারের ফলে মসুর, ছোলা, মুগ, চীনাবাদাম, বরবটি ও মাসকলাইয়ের ফলন ১৫-৪৫ শতাংশ এবং সয়াবিনের ক্ষেত্রে ৭০-১৫০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।
মসুর, মুগ ও মাসকলাইয়ের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৪৫ গ্রাম এবং ছোলা, চীনাবাদাম, সয়াবিন ও বরবটির ক্ষেত্রে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৩০ গ্রাম জীবাণু সার মেশাতে হবে। জীবাণু সারের পরিমাণ বেশি হলে কোনো ক্ষতি নেই। জীবাণু সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। জীবাণু সার যেহেতু জীবন্ত জীবাণু দিয়ে তৈরি করা হয়, তাই ফসলের ফলন নির্ভর করে জীবন্ত জীবাণুর সংখ্যার ওপর। তাই জীবাণু সার ক্রয় করার পর থেকে বীজের সঙ্গে মিশিয়ে বপন করা পর্যন্ত এদের জীবিত রাখতে হয়। এজন্য রোদ ও তাপ থেকে এ সারের প্যাকেটটিকে দূরে রাখতে হবে।
জীবাণু সার প্রযুক্তিটি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে ফসলের খাদ্য উপাদানের পরিমাণ ও জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করাসহ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা সম্ভব।

No comments:

Post a Comment