Wednesday, January 4, 2012

মাটির নিচের তাপ দিয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব

মাটির নিচের তাপ দিয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মাটির নিচের তাপমাত্রাকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের মাটির নিচের উচ্চ তাপমাত্রা দিয়ে সহজেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সুমছুদ্দিন আহমেদ।
বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছে তেল-গ্যাস পুড়িয়ে তাপ উৎপাদনের চাইতে প্রকৃতিগতভাবেই মাটির নিচের তাপমাত্রাকে কাজে লাগিয়ে সহজে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

ফিলিপাইতাদেমোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৩৭ শতাংশ সমান ১৯ শ ৬৯ মেগাওয়াট, আইসল্যান্ড মোট ৩০ শতাংশ ৫৭৫ মেগাওয়াট আমেরিকা ৩ হাজার ৮৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জিও থার্মাল থেকে যোগান দিচ্ছে।
‘এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশে জিও থার্মাল এনার্জি কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম একপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) সাবেক মহাব্যবস্থাপক সুমছুদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেছেন, তেল/গ্যাস/কয়লা পুড়িয়ে যে তাপ উৎপন্ন হয় সেই তাপ দিয়ে পানিকে বাষ্পীভূত করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়।
এর চাইতে আমাদের দেশের মাটির নিচে যে তাপমাত্রা রয়েছে তা দিয়ে সহজে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
তিনি বলেন, কুপ খনন করে পানি পাম্প করে অন্যদিক দিয়ে বাষ্পীভূত করে টারবাইনের ভিতর দিয়ে নিয়ে গেলেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরে রিসাইক্লিং পদ্ধতিতে তা আবারও কূপে নেওয়া যায়।
জয়পুরহাটের কুচমা এলাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, এখানে ৪ হাজার মিটার মাটির নিচে গড়ে ১৪৫ ডিগ্রি,সেলসিয়াস তাপমাত্রা রয়েছে। যা দিয়ে পানি বাষ্পীভূত করে সহজেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন জয়পুরহাট থেকে দেশের যতই উত্তরে দিকে যাওয়া যায় ততই মাটির নিচের এ তাপমাত্র বাড়ন্ত পাওয়া যায়।
অপর এক বিশেষজ্ঞ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রতি ১০০মিটার মাটির গভীরতায় ২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।যা রংপুর অঞ্চলে ৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রয়েছে।
সামছুদ্দিন আরও বলেন, জিও থার্মাল এনার্জিতে দেশের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে কাজে লাগানো যায়। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দুষণমুক্ত থাকবে একই সঙ্গে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপ্লব সাধিত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের এই পদ্ধতিকে জিও থার্মাল এনার্জি বলা হয়। এতে দেশের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় হলেও এখন পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
এমনকি সুইডেনের রয়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (কেটিএইচ) ইন স্টকহোম এর দেওয়া একটি প্রস্তাব দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে পেট্রোবাংলার অসহযোগিতার কারণে।
২০০৯ সালের ২এপ্রিলে কেটিএইচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিভাগের সঙ্গে অরগানাইজেশন অব দ্যা বাংলাদেশ জিও থার্মাল নামের একটি প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করে।
ড. হার্বার্ট হ্যংকেরকে প্রধান করে একটি প্রকল্প কমিটি করা হয়। এতে প্রকল্প ব্যবস্থাপক করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাসানকে।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের ভূগর্ভের তাপমাত্রা সমীক্ষা করাও বিদ্যুৎ উৎপাদনে উপযোগী কি-না যাচাই করে দেখা।
সামছুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, প্রকল্পের পরিচালক হার্বার্ট হ্যংকার একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন। কিন্তু সরকারে সহায়তা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
তিনি দাবি করেন তাদের, দেশে খনিজ অনুসন্ধান ও উন্নয়নের জন্য যে সব কূপ খনন করা হয়েছে। সেসব কূপের ভূগর্ভের তাপমাত্রার তথ্য চেয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় তথ্যসহায়তা দেওয়ার জন্য পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেয়। পেট্রোবাংলা নির্দেশ পাওয়ার পর বাপেক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে।
সে মোতাবেক বাপেক্সে যোগাযোগ করলে বাপেক্সের তৎকালীন এমডি (বর্তমানে পিএসসির পরিচালক) এমাজউদ্দিন আহমেদ আমাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন।
তারপর হার্বার্ট হ্যংকের বাংলাদেশ থেকে চলে যান।
সুইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এতে লাভ কি এ প্রশ্ন করা হলে সামছুদ্দিন বলেন, হয়ত সমীক্ষা করা গেলে তারা পরবর্তীতে জিও থার্মাল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তাব করত।
আমাদের দেশে যে সব কোম্পানি গ্যাস ও কয়লা ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা খনিজ আবিষ্কার করলে সেখান থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে কি সে রকম কোন বিষয় জড়িত রয়েছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ ধরণের কোনও বিষয় ছিল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের দেশের একশ্রেণীর কর্মকর্তা আছেন যারা শুধু কোন প্রকল্প নিলে বেশি টাকা নিজের পকেটস্থ করা যাবে সেই ধান্ধায় থাকেন।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানানা, প্রফেসর হ্যংকের (সুইডেন), প্রফেসর বদরুল ইমাম এবং আমি নিজে জড়িত থেকে ঠাকুরগাঁও এ সমীক্ষা চালিয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট বলে মনে হয়নি।
সুইডেনের ওই বিশ্ববিদ্যালয় এনিয়ে আগ্রহ দেখিয়ে ছিল। আমাদের কাছে তারা তথ্য চেয়েছিল। আমরা বলেছি আপনারা নিজেরা কূপ খনন করে সমীক্ষা চালান।
তথ্য না দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, সব তথ্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই- ইলাহী চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, জিও থার্মাল এনার্জি নিয়ে যে সব কথা হয় সবগুলো হাওয়ার উপর। বাংলাদেশ ভূতত্ত্ব অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁওয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। তবে ফলাফল আশাব্যঞ্জক নয়।
সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা বিষয়ে বলেন, ওরা আমাদের কাছে এসেছিল আমরা তাদের কাজ করতে বলেছি।
বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার অসহযোগিতার কারণে তারা কাজ করতে পারছে না মর্মে যে অভিযোগ সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তো ভূতত্ত্ব অধিদপ্তরের। বাপেক্স, পেট্রোবাংলা আসবে কেন?
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১১

No comments:

Post a Comment