মাটির নিচের তাপ দিয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব

Browse this blogsite by this web address: www.technewsbd.com
শুটকি বাঙালির একটি পছন্দের খাবার। এমন অনেক পরিবার আছে যাদের খাবার টেবিলে শুটকি না থাকলে যেন খাবার পরিপূর্ণ হয় না। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের বাজারে যে শুটকি পাওয়া যায় তার প্রায় ৯০ ভাগে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি জেনেও এ কাজটি করে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। শুটকিতে বিষ না মিশিয়েও নানাভাবে তা সংরক্ষণ ও শুকানো যায়। দেশের শুটকিপ্রিয় মানুষদের কথা ভেবে কীটনাশকমুক্ত শুটকি তৈরিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. একেএম নওশাদ আলম সহজলভ্য ও সস্তা উপাদান ব্যবহার করে বক্স ও রিং টানেল তৈরি করেছেন। এটি মাঠপর্যায়ে উন্নতমানের শুটকি উত্পাদনে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে বলে তিনি মনে করছেন।
জালে ঢাকা বক্স টানেল তৈরির জন্য বাঁশের বা কাঠের খুঁটির ওপর ২০ থেকে ৪৩ ফুট উচ্চতার একটি বাঁশের মাচা তৈরি করে এর ওপর সামনের দিকে ঢালু একটি আয়তকার টানেল বসিয়ে দিতে হবে। টানেলের পেছনের খাড়া পা দু’টির উচ্চতা ২.৫ ফুট এবং সামনের পা দু’টির উচ্চতা ২ ফুট হবে। টানেলের ওপর থেকে মাছ ঝুলিয়ে দেয়ার জন্য লম্বালম্বিভাবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর বাঁশ বা বাঁশের ফালি বেঁধে দিতে হবে। ছাদ ঢালু করার ফলে টানেলের উপরিতলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বেশি সূর্যালোক প্রবেশ করবে এবং ঝুলে থাকা প্রতিটি মাছ সমান হারে সূর্যালোক পাবে। মাছ ঝুলানোর পর পুরো টানেলটি আগাগোড়া মশারির জাল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। মাছি প্রবেশ ঠেকাতে ভোর হওয়ার আগেই অন্ধকার থাকতেই টানেলে মাছ ঝুলিয়ে দেয়া উচিত। ঝুলানো মাছ দিনেরবেলা উল্টে-পাল্টে দেয়ার প্রয়োজন নেই।
অপরদিকে জালে ঢাকা ঝুলন্ত রিং টানেল তৈরির জন্য ৫/৬ ফুট লম্বা একটি বাঁশের টুকরোকে প্রথমে গাঁট বাদ দিয়ে লম্বালম্বি সমান ৬ বা ৮ ভাগে চিরে ভেতরে কয়েকটি রিং বেঁধে পলোর মত আকৃতি করতে হবে। মাছ ঝুলানোর জন্য আরো কয়েকটি ছোট সাইজের রিং ভেতরের দিকে পর পর বেঁধে দিতে হবে। টানেলের চারদিকে মশারির জাল দিয়ে ঢেকে শক্ত বাঁশের আড়ার মাধ্যমে উপরে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। পর পর তিনটি করে রিং এ সাজানো দুই স্তর বিশিষ্ট একটি রিং টানেল মাত্র ৭০ থেকে ৮০ টাকায় তৈরি করা যায়, যাতে প্রায় ২০ কেজি লম্বা লইটা অথবা ২৫ কেজি ছুরি মাছ শুকানো সম্ভব। ছোট মাছ শুকানোর জন্য টানেলের মধ্যে রিংয়ের পরিবর্তে হালকা বুননের বাঁশের চালুনি ব্যবহার করা হয়। ৫ ফুট উচ্চতা এবং ৩ ফুট ব্যাসের এই রিং টানেলে ১০ ইঞ্চি পর পর ৫/৬ টি চালুনি বেঁধে অনায়েসে ২০ কেজি ছোট মাছ শুকানো যায়। রিং টানেল ব্যবহার করে বাড়ির আঙ্গিনা বা ছাদেও পরিবারের চাহিদা মেটানোর মত মাছ শুকানো যায়।
Source: Daily Ittefaq
কাপ্তাই সেনা জোন ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটেলিয়নের উদ্ভাবন
বিদ্যুত্ সংকট ও বিভ্রাটের মাঝে আশার আলো দেখিয়েছে কাপ্তাই সেনা জোন-৭ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটেলিয়ন। প্রায় বিনা খরচে বিদ্যুত্ ছাড়াই বাতি জ্বালানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে তারা। মাত্র ৩০ টাকা খরচ করে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশেষ এক ধরনের সোলার বোতল বাল্ব তৈরি করা হয়েছে, যা ৫৫ ওয়াট বাল্বের সমপরিমাণ আলো দেয়। একটি বোতল বাল্বের কার্যকারিতা থাকবে কমপক্ষে পাঁচ বছর। অবশ্য এই বাল্ব শুধু দিনের বেলাতেই আলো দিবে। এতে দেশে বিদ্যুত্ সাশ্রয়ের পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠী বছরের পর বছর বিনা খরচে বিদ্যুত্ সুবিধার আওতায় আসবে। বিশেষ করে দুর্গম পার্বত্যাঞ্চল, বড় বড় শহরের বস্তি এলাকা এবং বিভিন্ন কলকারখানা/গোডাউনে এই পদ্ধতির বাল্ব বেশি কাজে লাগবে বলে জানান বাল্বের উদ্ভাবক কাপ্তাই সেনা জোনের কর্মকর্তারা।
কাপ্তাই জোন কমান্ডার ও ৭ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল ইলিয়াস হোসেন পিএসসি ইঞ্জিনিয়ার্স জানান, এই প্রযুক্তিতে প্লাষ্টিক অথবা কাঁচের বোতল বাতি হিসেবে কাজ করে। বোতলে বিশুদ্ধ পানি ও ৩ চামচ (১০ মিলিলিটার) ব্লিচ কিংবা তরল ক্লোরিন দ্রবণ মিশ্রিত করে বোতলের মুখ ভালোভাবে গালা দিয়ে বন্ধ করা হয়। এরপর ১ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১ ফুট প্রস্থ আয়তনবিশিষ্ট একটি টিন মাঝখানে ছিদ্র করে বোতলের গায়ে লাগাতে হবে। বাড়ি বা বাসার ছাদের টিনটি বোতলের পরিমাপে ছিদ্র করে ওই স্থানে বোতল স্থাপন করতে হবে। এটি স্থাপনের সময় বোতলের ১ তৃতীয়াংশ টিনের উপরিভাগে এবং ২ তৃতীয়াংশ ঘরের ভিতর রেখে বোতলটি বসাতে হবে। বৃষ্টির পানি ঘরে প্রবেশ না করার জন্য বোতলের চতুর্দিকে গালা দিয়ে শক্ত করে আটকে দিতে হবে।
দিনের বেলায় সূর্যের আলো বোতলের উপরের অংশে পড়লে সে আলো প্রতিফলিত হয়ে বোতলের পানির সাহায্যে ঘরের ভিতর সমানভাবে আলো ছড়িয়ে পড়বে, যা ৫৫ ওয়াটের একটি এনার্জি বাল্বের আলোর সমতুল্য। রাতের বেলায় বোতলের মধ্যে রাস্তার কোন বাতির আলো পড়লে তাও প্রতিফলিত হয়ে ঘর আলোকিত করবে। বোতলে ক্লোরিন অথবা ব্লিচ মিশ্রিত পানি পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত বদলাতে হবে না। তিনি বলেন, একটি বোতল বাল্ব তৈরি করে বাড়িতে স্থাপন করলে সূর্যের আলো থেকে এই বাল্বটি কোন খরচ ছাড়াই টানা ৫ বছর পর্যন্ত নিয়মিত আলো দিয়ে যাবে।
কাপ্তাই সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর শাখাওয়াত হোসেন উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশে এই সোলার বাল্ব প্রযুক্তি প্রথম উদ্ভাবিত হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই বাল্ব তৈরি করতে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা খরচ হতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত করলে ২০ টাকায় করা সম্ভব। তিনি বলেন, এই বাল্ব ব্যবহারে কোন বিদ্যুত্ খরচ নেই। সূর্যের আলোই এই বাল্বের মূল বিদ্যুত্ শক্তি। এ প্রযুক্তি প্রস্তুতকরণে প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো সহজলভ্য। এটি পরিবেশবান্ধব ও কোন প্রকার দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই।
উদ্ভাবনকৃত সোলার বোতল বাল্ব প্রযুক্তি জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গত রবিবার কাপ্তাই সেনা জোন সদর দপ্তরে ৭ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটেলিয়ন কর্তৃপক্ষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে কাপ্তাই ও রাজস্থলী উপজেলার আগ্রহী মানুষকে সোলার বাল্ব তৈরি ও ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সামসুজ্জামান পিএসসি। আরো উপস্থিত ছিলেন কাপ্তাই জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ ইলিয়াস হোসেন পিএসি ইঞ্জিনিয়ার্স, কাপ্তাই ৪ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আখতার শহিদ পিএসসি, কাপ্তাই জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর সাখাওয়াত হোসেন, কাপ্তাই ডিজিএফআই অধিনায়ক মেজর রেজাউর রহমান রেজা, রাঙ্গামাটি রিজিয়নের জি-টু (আই) মেজর তারিক, ৫ আনসার ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক জিয়া, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসু ছাইন চৌধুরী, রাজস্থলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থোয়াই সুই খই মারমা, কাপ্তাই পানি বিদ্যুত্ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ফেরদাউস আলী, কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ প্রমুখ।
সোলার বোতল বাল্ব সম্পর্কে রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সামসুজ্জামান বলেন, দেশের বিদ্যুত্ ঘাটতি অনেকাংশে পূরণসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিদ্যুত্ চাহিদা মেটাতে এ প্রযুক্তি অনেকটাই কার্যকর। পার্বত্য এলাকায় বিশেষভাবে এ প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কাপ্তাই সেনা জোনের উদ্যোগে দেশে প্রথম উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি দ্রুততম সময়ে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
Source:www.ittefaq.com.bd