আসছে খরাসহিষ্ণু ধান
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের বিস্তৃর্ণ এলাকা দিন দিন খরাপ্রবণ অঞ্চলে পরিনত হচ্ছে। অসময়ে বৃষ্টিপাত এবং বিলম্বিত বর্ষার কারণে কৃষকরা উপযুক্ত সময়ে চারা রোপণ করতে পারছে না। আবার অঙ্গজ বৃদ্ধির পর্যায়ে বা ফুল আসার সময়ে অথবা দানা বাধার সময়ে প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হলে ধানের ফলন আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। খরার মাত্রা বেশি হলে অনেক সময় সম্পূর্ণ ফসলই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিকূল অবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট খরাসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অনেক দিন ধরে। সমপ্রতি ব্যাপক গবেষণার ফলে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট একটি ধানের জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে, যা খরা মোকাবিলায় যথেষ্ট কার্যকর বলে বিভিন্ন গবেষণার মাঠে প্রমাণিত হয়েছে। ইরি উদ্ভাবিত খরাসহিষ্ণু ধানের এই জাতটির লাইন নম্বর হচ্ছে আই আর ৪৩৭১-৭০-১-১। কৃষকের মাঠে খরা মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হওয়ায় ভারত ২০০৯ সালে শাহবাগী ধান নামে এই জাতটিকে অনুমোদন দেয়, যা এখন ভারতের খরাপ্রবণ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে এই জাতটির ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে অচিরেই এই জাতটি খরাসহিষ্ণু জাত হিসেবে বাংলাদেশে অনুমোদন পাবে। ঝঞজঅঝঅ-ওজজও প্রকল্পের আওতায় বিল এন্ড মেলিন্ডা গেট্স ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে আরডিআরএস গত দুই মৌসুম ধরে এই জাতটির খরাসহিষ্ণুতা পর্যবেক্ষণ করছে এবং এই বছর কৃষকের মাঠে এর গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করেছে। দেখা যাচ্ছে কৃষক স্বতঃস্ফুর্তভাবে জাতটিকে একটি খরাসহিষ্ণু জাত হিসেবে গ্রহণ করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খরা মোকাবিলায় কার্যকর এবং উপযুক্ত বলে বিভিন্ন গবেষণায় ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
খরাসহিষ্ণু জাতের পরিচিতি:খরাসহিষ্ণু জাত হিসেবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আই আর ৪৩৭১-৭০-১-১ ধানের জাতটির উপযুক্ততা যাচাই হচ্ছে। এই ধানের জীবনকাল ১১৫ থেকে ১২০ দিন। ধানের ছড়ার দৈর্ঘ্য ২২.১ থেকে ২৫.৪ সেমি। খরাসহিষ্ণু এই ধান গাছের উচ্চতা ৮৫ থেকে ৯০ সেমি। ১০০০ ধানের ওজন ২২.৮০ গ্রাম এবং ধানে চালের পরিমাণ ৬৪.৭%। স্বাভাবিক অবস্থায় হেক্টরপ্রতি ৩.৮ থেকে ৪.৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
খরাসহিষ্ণু ধান উৎপাদন কলাকৌশল:সাধারণত খরাপ্রবণ এলাকায় খরাসহিষ্ণু এই ধরনের ধানের চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। জুন মাসের মাঝামাঝিতে বীজতলায় বীজ ফেলে জুলাই মাসের প্রথমদিকে ২৫ দিনের চারা রোপণ করা উচিত। যেহেতু এই ধান স্বল্পমেয়াদি তাই কোনোভাবেই ২৫ দিনের বেশি বয়সের চারা রোপণ করা উচিত নয়। প্রতি হেক্টরে চারা রোপণের জন্য ৪০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। যেহেতু স্বল্পমেয়াদি ধানের জাতে কুশির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হয়, সেহেতু চারা রোপণের ক্ষেত্রে ৬ ইঞ্চির (১৫ সেমি) বেশি দূরত্বে চারা রোপণ করা উচিত হবে না। চারার গোছা থেকে গোছার দূরত্বও ৬ ইঞ্চির বেশি হওয়া উচিত নয়। প্রতি গোছায় ৩ থেকে ৪টি চারা রোপণ করা উচিত।
মাটি পরীক্ষা করে অনুমোদিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব। মাটি পরীক্ষা করা সম্ভব না হলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৭৫ কেজি টিএসপি এবং ৩৪ কেজি এমওপি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হয়। চারা রোপণের ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে আরো হেক্টরপ্রতি ৬৫ কেজি ইউরিয়া সার এবং চারা রোপণের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে হেক্টরপ্রতি আরো ৬৫ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। অবশ্যই জমিকে আগাছামুক্ত রাখতে হবে। দ্বিতীয়বার ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সময় জমি থেকে আগাছা পরিস্কার করে সারকে কাঁদার সাথে মিশিয়ে দিলে ধানগাছ ভালভাবে সার গ্রহণ করতে পারবে।
চারা রোপণের প্রথম ৪০ দিন পর্যন্ত জমিকে আগাছামুক্ত রাখলে পরবর্তীতে সাধারণত আর আগাছা হয় না। আগাছানাশক দিয়েও জমিকে আগাছামুক্ত রাখা যায়। এজন্য চারা রোপণের ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে জমিতে ছিপছিপে পানি থাকা অবস্থায় হেক্টরপ্রতি ৮০০ গ্রাম পেটিলাক্লোর অথবা হেক্টরপ্রতি ২০ গ্রাম পাইরাজোসালফিউরোন ইথাইল প্রয়োগ করতে হবে। ধানের জমির বিভিন্ন স্থানে বাঁশের কঞ্চি পুঁতে দিয়ে পাখি বসার ব্যবস্থা করে দিলে পাখি পোকা-মাকড় খেয়ে জমিতে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব কমাতে পারে। ধানগাছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বেশি হলে উপযুক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশে সাধারণত আশ্বিন-কার্তিক মাসে খরা হয়। এই সময়ে সেচ ব্যবস্থার সুযোগ না থাকলেও এই ধানগাছ সহজে ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। প্রায় ৮০ ভাগ ধান পেকে গেলে ফসল কেটে ফেলতে হবে।
সাধারণত বীজ বপনের ১১৫ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ধান পেকে যায়। ঠিকমত চাষাবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ৪ থেকে ৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে।
খরাসহিষ্ণু ধানগাছ শুষ্কতা সহ্য করতে পারলেও ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না। সেজন্য উত্তরাঞ্চলে কোনোভাবেই এই ধানের জাত দেরীতে চাষাবাদ করা যাবে না। পাশাপাশি বোরো মৌসুমেও এ ধানের চাষ করা যাবে না।
খরাসহিষ্ণু জাতের পরিচিতি:খরাসহিষ্ণু জাত হিসেবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আই আর ৪৩৭১-৭০-১-১ ধানের জাতটির উপযুক্ততা যাচাই হচ্ছে। এই ধানের জীবনকাল ১১৫ থেকে ১২০ দিন। ধানের ছড়ার দৈর্ঘ্য ২২.১ থেকে ২৫.৪ সেমি। খরাসহিষ্ণু এই ধান গাছের উচ্চতা ৮৫ থেকে ৯০ সেমি। ১০০০ ধানের ওজন ২২.৮০ গ্রাম এবং ধানে চালের পরিমাণ ৬৪.৭%। স্বাভাবিক অবস্থায় হেক্টরপ্রতি ৩.৮ থেকে ৪.৫ টন ফলন পাওয়া যায়।
খরাসহিষ্ণু ধান উৎপাদন কলাকৌশল:সাধারণত খরাপ্রবণ এলাকায় খরাসহিষ্ণু এই ধরনের ধানের চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। জুন মাসের মাঝামাঝিতে বীজতলায় বীজ ফেলে জুলাই মাসের প্রথমদিকে ২৫ দিনের চারা রোপণ করা উচিত। যেহেতু এই ধান স্বল্পমেয়াদি তাই কোনোভাবেই ২৫ দিনের বেশি বয়সের চারা রোপণ করা উচিত নয়। প্রতি হেক্টরে চারা রোপণের জন্য ৪০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। যেহেতু স্বল্পমেয়াদি ধানের জাতে কুশির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হয়, সেহেতু চারা রোপণের ক্ষেত্রে ৬ ইঞ্চির (১৫ সেমি) বেশি দূরত্বে চারা রোপণ করা উচিত হবে না। চারার গোছা থেকে গোছার দূরত্বও ৬ ইঞ্চির বেশি হওয়া উচিত নয়। প্রতি গোছায় ৩ থেকে ৪টি চারা রোপণ করা উচিত।
মাটি পরীক্ষা করে অনুমোদিত মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব। মাটি পরীক্ষা করা সম্ভব না হলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৭৫ কেজি টিএসপি এবং ৩৪ কেজি এমওপি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হয়। চারা রোপণের ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে আরো হেক্টরপ্রতি ৬৫ কেজি ইউরিয়া সার এবং চারা রোপণের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে হেক্টরপ্রতি আরো ৬৫ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। অবশ্যই জমিকে আগাছামুক্ত রাখতে হবে। দ্বিতীয়বার ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সময় জমি থেকে আগাছা পরিস্কার করে সারকে কাঁদার সাথে মিশিয়ে দিলে ধানগাছ ভালভাবে সার গ্রহণ করতে পারবে।
চারা রোপণের প্রথম ৪০ দিন পর্যন্ত জমিকে আগাছামুক্ত রাখলে পরবর্তীতে সাধারণত আর আগাছা হয় না। আগাছানাশক দিয়েও জমিকে আগাছামুক্ত রাখা যায়। এজন্য চারা রোপণের ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে জমিতে ছিপছিপে পানি থাকা অবস্থায় হেক্টরপ্রতি ৮০০ গ্রাম পেটিলাক্লোর অথবা হেক্টরপ্রতি ২০ গ্রাম পাইরাজোসালফিউরোন ইথাইল প্রয়োগ করতে হবে। ধানের জমির বিভিন্ন স্থানে বাঁশের কঞ্চি পুঁতে দিয়ে পাখি বসার ব্যবস্থা করে দিলে পাখি পোকা-মাকড় খেয়ে জমিতে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব কমাতে পারে। ধানগাছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বেশি হলে উপযুক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশে সাধারণত আশ্বিন-কার্তিক মাসে খরা হয়। এই সময়ে সেচ ব্যবস্থার সুযোগ না থাকলেও এই ধানগাছ সহজে ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। প্রায় ৮০ ভাগ ধান পেকে গেলে ফসল কেটে ফেলতে হবে।
সাধারণত বীজ বপনের ১১৫ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ধান পেকে যায়। ঠিকমত চাষাবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ৪ থেকে ৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যেতে পারে।
খরাসহিষ্ণু ধানগাছ শুষ্কতা সহ্য করতে পারলেও ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না। সেজন্য উত্তরাঞ্চলে কোনোভাবেই এই ধানের জাত দেরীতে চাষাবাদ করা যাবে না। পাশাপাশি বোরো মৌসুমেও এ ধানের চাষ করা যাবে না।
ড. এম. জি. নিয়োগী
হেড অফ এগ্রিকালচার, আরডিআরএস, বাংলাদেশ
No comments:
Post a Comment