ডুবে যাওয়া জাহাজ উত্তোলনের সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন
০০ বরিশাল অফিস
দুর্ঘটনাকবলিত যে কোন ওজনের জাহাজ পানির তলদেশ থেকে উত্তোলনের সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন নগরীর পূর্ব হরিনাফুলিয়ার বাসিন্দা বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য তোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী। তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বুয়েটের পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছে।
এক হিসেবে দেখা যায় দশ বছরে দেশে ১৮৬টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটলেও উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম ও হামজা'র উত্তোলন ক্ষমতার চেয়ে ডুবন্ত জাহাজের ওজন ১০ গুণ বেশি হওয়ায় বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এতে করে জ্বালানি তেল ও জনবল বাবদ সরকারকে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। বর্তমানেও দুর্বল ঐ জাহাজের পিছনে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
দেশের দু'টি উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম ও হামজার উত্তোলন ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন। বর্তমানে দেশে ৫/৭শ' টন ওজনের জাহাজ তৈরি হচ্ছে। সরকারই তা তৈরিতে অনুমতি দিচ্ছে। অথচ দুর্ঘটনাকবলিত হলে কিভাবে জাহাজ উত্তোলন করা হবে সে ব্যাপারে স্বাধীনতা পরবর্তী কোন সরকার মাথা ঘামায়নি। রাজনৈতিক সরকারগুলোর একই কথা দাতা গোষ্ঠী না পাওয়া গেলে বিদেশ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ আনা সম্ভব নয়।
১৯৯১ সালে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী ১৭০ টন ওজনের সামাদ লঞ্চ কীর্তনখোলা নদীতে ডুবে যায়। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম ও হামজা দিয়ে তা তোলা সম্ভব হয়নি। এরপর থেকে বিমান বাহিনীর নন কমিশন লিডিং এ্যায়ারক্রাফট ম্যান তোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় তিনি সফলও হন। কিন্তু আর্থিক দৈন্যতার কারণে তিনি বেশিদূর এগোতে পারেননি।
তিনি ইত্তেফাককে জানান, ডুবন্ত জাহাজ উত্তোলনে তার গবেষণালব্ধ বিষয়টি কাজে লাগালে যে কোন ওজনের জাহাজ মহাসাগর, সাগর ও নদীর তলদেশ থেকে উত্তোলন সম্ভব। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিকে তিনি ৩টি ভাগে ভাগ করেছেন। সাড়ে ১১শত টন ওজনের জাহাজ উত্তোলনের জন্য তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি তৈরিতে ব্যয় হবে ৭৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৭ হাজার ৮৫০ টন ওজনের জাহাজ উত্তোলনের জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ৭৮ হাজার ৫শ' টন ওজনের নৌযানের জন্য ৭৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বাংলাদেশে প্রাপ্য কাচামাল দিয়ে তৈরি করা যাবে তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সপ্তাহখানেকের মধ্যে ডুবন্ত নৌযানকে পানিতে ভাসানো সম্ভব হবে।
তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ডুবন্ত নৌযান তুলতে হলে লঞ্চ তৈরির সময় বডির দু'পাশে শক্ত লোহার পিলার এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে জাহাজ ডুবে গেলেও ঐ পিলার কাজে লাগানো যায়। ডুবে গেলে ঐ লোহার পিলারের সাথে ব্যবহার করা হবে পানি ভর্তি স্টিলের সিলিন্ডার। ঐ সিলিন্ডার ডুবন্ত নৌযানের দুপাশে চেইন দিয়ে আটকে দেয়া হবে। সিলিন্ডারগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে করে তার ভিতরে পানি প্রবেশ ও বের করা যায়। গোলাকার সিলিন্ডারটি হবে ১ হাজার মিটার লম্বা এবং ব্যাস হবে ১০ মিটার। সিলিন্ডারের ভিতর থেকে পানি বের করার জন্য কমপ্রেসার মেশিন এবং পানির উপর থেকে ডুবন্ত নৌযান পর্যন্ত পাইপ দেয়া থাকবে। এ জন্য প্রয়োজন হবে প্রশিক্ষণরত ডুবুরি।
ডুবন্ত নৌযানে সিলিন্ডার বেঁধে পানি বের করার সাথে সাথে প্রবল বেগে সিলিন্ডার ভেসে উঠবে সাথে সাথে নৌযানটিও ভেসে উঠবে। এতে সমস্ত নৌযানটি পানির উপর ভেসে উঠবে না। নৌযানটি কাঁত হয়ে পড়তে পারে। সে জন্য তিনি আরো একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এক হাজার মিটার লম্বা ও ১০ মিটার প্রস্থের ৪টি এ্যাংগেলের সাথে সিলিন্ডার দেয়া থাকবে।
যা ডুবন্ত নৌযানের নিচে থাকবে। এতে নৌযানটিকে সম্পূর্ণরূপে ভেসে উঠতে সহায্য করবে। যা একটি ভাসমান ডকইয়ার্ডের কাজ করবে।
বিষয়টি উদ্ভাবনের পর তোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. মোঃ খোরশেদ এবং ন্যাভাল আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. সিদ্দিকুল বারীর সাথে দেখা করলে তাকে মডেল তৈরির নির্দেশ দেন। তিনি বিভিন্ন ডকইয়ার্ড ঘুরে একটি মডেল তৈরি করে বুয়েটে জমা দেন। সেখানকার পরীক্ষায় তার উদ্ভাবনী বিষয়টি সফলতা পায়। তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সরকারি কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন পেয়েছেন।
তোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরীর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সফলতা পেয়েছে স্বীকার করে ড. বারী জানান, সমপ্রতি বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে তোফাজ্জেল চৌধুরীর আবিষ্কৃত পদ্ধতি সম্পর্কে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পোস্ট গ্রাজুয়েট লেকচার কক্ষে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনার শেষে ঐ পদ্ধতি বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ঐ প্রকল্পের মাধ্যমে শীঘ্রই বুড়িগঙ্গা নদীতে আরো একটি পরীক্ষা চালানো হবে।
Source: Daily Ittefaq, 25-10-10
এক হিসেবে দেখা যায় দশ বছরে দেশে ১৮৬টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটলেও উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম ও হামজা'র উত্তোলন ক্ষমতার চেয়ে ডুবন্ত জাহাজের ওজন ১০ গুণ বেশি হওয়ায় বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এতে করে জ্বালানি তেল ও জনবল বাবদ সরকারকে কোটি কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। বর্তমানেও দুর্বল ঐ জাহাজের পিছনে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
দেশের দু'টি উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম ও হামজার উত্তোলন ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন। বর্তমানে দেশে ৫/৭শ' টন ওজনের জাহাজ তৈরি হচ্ছে। সরকারই তা তৈরিতে অনুমতি দিচ্ছে। অথচ দুর্ঘটনাকবলিত হলে কিভাবে জাহাজ উত্তোলন করা হবে সে ব্যাপারে স্বাধীনতা পরবর্তী কোন সরকার মাথা ঘামায়নি। রাজনৈতিক সরকারগুলোর একই কথা দাতা গোষ্ঠী না পাওয়া গেলে বিদেশ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ আনা সম্ভব নয়।
১৯৯১ সালে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী ১৭০ টন ওজনের সামাদ লঞ্চ কীর্তনখোলা নদীতে ডুবে যায়। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তুম ও হামজা দিয়ে তা তোলা সম্ভব হয়নি। এরপর থেকে বিমান বাহিনীর নন কমিশন লিডিং এ্যায়ারক্রাফট ম্যান তোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় তিনি সফলও হন। কিন্তু আর্থিক দৈন্যতার কারণে তিনি বেশিদূর এগোতে পারেননি।
তিনি ইত্তেফাককে জানান, ডুবন্ত জাহাজ উত্তোলনে তার গবেষণালব্ধ বিষয়টি কাজে লাগালে যে কোন ওজনের জাহাজ মহাসাগর, সাগর ও নদীর তলদেশ থেকে উত্তোলন সম্ভব। তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিকে তিনি ৩টি ভাগে ভাগ করেছেন। সাড়ে ১১শত টন ওজনের জাহাজ উত্তোলনের জন্য তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি তৈরিতে ব্যয় হবে ৭৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৭ হাজার ৮৫০ টন ওজনের জাহাজ উত্তোলনের জন্য ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ৭৮ হাজার ৫শ' টন ওজনের নৌযানের জন্য ৭৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে। বাংলাদেশে প্রাপ্য কাচামাল দিয়ে তৈরি করা যাবে তার উদ্ভাবিত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সপ্তাহখানেকের মধ্যে ডুবন্ত নৌযানকে পানিতে ভাসানো সম্ভব হবে।
তার উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে ডুবন্ত নৌযান তুলতে হলে লঞ্চ তৈরির সময় বডির দু'পাশে শক্ত লোহার পিলার এমনভাবে লাগাতে হবে যাতে জাহাজ ডুবে গেলেও ঐ পিলার কাজে লাগানো যায়। ডুবে গেলে ঐ লোহার পিলারের সাথে ব্যবহার করা হবে পানি ভর্তি স্টিলের সিলিন্ডার। ঐ সিলিন্ডার ডুবন্ত নৌযানের দুপাশে চেইন দিয়ে আটকে দেয়া হবে। সিলিন্ডারগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে করে তার ভিতরে পানি প্রবেশ ও বের করা যায়। গোলাকার সিলিন্ডারটি হবে ১ হাজার মিটার লম্বা এবং ব্যাস হবে ১০ মিটার। সিলিন্ডারের ভিতর থেকে পানি বের করার জন্য কমপ্রেসার মেশিন এবং পানির উপর থেকে ডুবন্ত নৌযান পর্যন্ত পাইপ দেয়া থাকবে। এ জন্য প্রয়োজন হবে প্রশিক্ষণরত ডুবুরি।
ডুবন্ত নৌযানে সিলিন্ডার বেঁধে পানি বের করার সাথে সাথে প্রবল বেগে সিলিন্ডার ভেসে উঠবে সাথে সাথে নৌযানটিও ভেসে উঠবে। এতে সমস্ত নৌযানটি পানির উপর ভেসে উঠবে না। নৌযানটি কাঁত হয়ে পড়তে পারে। সে জন্য তিনি আরো একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এক হাজার মিটার লম্বা ও ১০ মিটার প্রস্থের ৪টি এ্যাংগেলের সাথে সিলিন্ডার দেয়া থাকবে।
যা ডুবন্ত নৌযানের নিচে থাকবে। এতে নৌযানটিকে সম্পূর্ণরূপে ভেসে উঠতে সহায্য করবে। যা একটি ভাসমান ডকইয়ার্ডের কাজ করবে।
বিষয়টি উদ্ভাবনের পর তোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. মোঃ খোরশেদ এবং ন্যাভাল আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. সিদ্দিকুল বারীর সাথে দেখা করলে তাকে মডেল তৈরির নির্দেশ দেন। তিনি বিভিন্ন ডকইয়ার্ড ঘুরে একটি মডেল তৈরি করে বুয়েটে জমা দেন। সেখানকার পরীক্ষায় তার উদ্ভাবনী বিষয়টি সফলতা পায়। তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সরকারি কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন পেয়েছেন।
তোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরীর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সফলতা পেয়েছে স্বীকার করে ড. বারী জানান, সমপ্রতি বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে তোফাজ্জেল চৌধুরীর আবিষ্কৃত পদ্ধতি সম্পর্কে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পোস্ট গ্রাজুয়েট লেকচার কক্ষে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনার শেষে ঐ পদ্ধতি বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ঐ প্রকল্পের মাধ্যমে শীঘ্রই বুড়িগঙ্গা নদীতে আরো একটি পরীক্ষা চালানো হবে।
Source: Daily Ittefaq, 25-10-10
No comments:
Post a Comment