পৃথিবী বদলে দেবে আমাদের সালমান!পৃথিবী বদলে দিতে পারে_এমন সব 'আইডিয়া' জনসমক্ষে তুলে আনার জন্য গুগল ২০০৮ সালে তাদের দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে 'প্রজেক্ট টেন টু দ্য হানড্রেড' পুরস্কার ঘোষণা করে। ১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এ পুরস্কার জেতার জন্য এক লাখ ৫৪ হাজার 'আইডিয়া' জমা পড়ে। দুই বছর যাচাই-বাছাই শেষে সেরা পাঁচ আইডিয়ার মধ্যে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী সালমান খানের বিনা মূল্যে অনলাইন ভিডিও টিউটরিয়াল 'খান একাডেমী'। জিতে নিয়েছেন ১৪ কোটি টাকার সমমানের পুরস্কার। বিস্তারিত জানাচ্ছেন হাজ্জাজ-বিন-ইউসুফ ও আল-আমিন কবির শখের বসে বা প্রয়োজনের তাগিদেই হাজারটা 'আইডিয়া' ঘুরপাক খায় মানুষের মাথায়। এর মধ্যে এমন অনেক আইডিয়া আছে, যা বাস্তবায়ন করতে পারলে বদলে যাবে গোটা পৃথিবীই। এ রকম পরিকল্পনাগুলোকে জনসমক্ষে আনার জন্য 'প্রজেক্ট টেন টু দ্য হানড্রেড' (www.project10tothe100.com) নামে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ১৭০টির বেশি দেশ থেকে পৃথিবী বদলে দিতে পারে এমন দাবি নিয়ে এক লাখ ৫৪ হাজার অ্যাপ্লিকেশন জমা পড়ে। দীর্ঘ দুই বছর যাচাই-বাছাই শেষে এ বিপুলসংখ্যক আইডিয়া থেকে চূড়ান্তভাবে ১৬টি পরিকল্পনা নির্বাচন এবং তার তালিকা প্রকাশ করে গুগল। এরপর চূড়ান্তভাবে এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে মাত্র পাঁচটি প্রকল্পকে চূড়ান্ত বিজয়ী আইডিয়া হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। এসব নির্বাচিত আইডিয়াকে আরো বিস্তৃত করার জন্য প্রতিটি প্রকল্পকে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর পরিকল্পনাকারীদের সম্মাননা দেওয়া হয়েছে পৃথিবী বদলে দেওয়ার 'আইডিয়া গুরু' হিসেবে।
সেরা পাঁচ 'আইডিয়া'
সেরা পাঁচ আইডিয়া'র মধ্যে শিক্ষা বিভাগে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে সালমান খানের 'খান একাডেমী'র (www.khanacademy.org) বিনা মূল্যে শিক্ষামূলক অনলাইন ভিডিও টিউটরিয়াল। এ প্রকল্প আরো এগিয়ে নিতে খান একাডেমীকে ২০ লাখ ডলার বা ১৪ কোটি টাকা পুরস্কার দিয়েছে গুগল। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও গণিত প্রতিযোগিতা দলকে (www.usfirst.org) 'রিয়েল ওয়ার্ল্ড ওয়ার্কিং এক্সপেরিয়েন্স' ধারণা দেওয়ার জন্য ৩০ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে। সরকারের সব কাজকে একেবারেই স্বচ্ছ করার জন্য http://public.resource.org ধারণাকেও দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ডলার পুরস্কার। গাড়ি চালানোতে নতুন প্রযুক্তির 'আইডিয়া' দেওয়ার জন্য http://shweeb.com প্রকল্পকে দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ডলার। আর আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে নতুন ধরনের আইডিয়া দেওয়ার জন্য ২০ লাখ ডলার পুরস্কার পেয়েছে এইমস নামের( www.aims.ac.ya) একটি প্রকল্প।
একজন সালমান খান
সালমানের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার নিউ অর্লিয়ন্স শহরে। তাঁর দাদাবাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে। অনেক আগেই সালমানের বাবা অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। যুক্তরাষ্ট্রেই বেড়ে ওঠেন সালমান। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব আইটি (এমআইটি) থেকে গণিত, তড়িৎ কৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান_এ তিন বিষয়েই স্নাতক করেন তিনি। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ কৌশলে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এখানেই থেমে থাকেনি তাঁর শিক্ষাজীবন। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে ব্যবসায় প্রশাসন থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এ মেধাবী।
তাঁর অনলাইন অঙ্ক শেখার টিউটরিয়াল সাইট www.khanacademy.org ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করলেও ২০০৯ সালের শেষ দিক থেকে তিনি এতে পরিপূর্ণ সময় দিতে শুরু করেন। এ পর্যন্ত খান একাডেমীর ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিও টিউটরিয়াল দেখা হয়েছে আড়াই কোটিরও বেশি বার! আর এ ইউটিউব চ্যানেলটির স্থায়ী দর্শকসংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি!
খান একাডেমীর বেড়ে ওঠা
২০০৪ সালের শেষ দিকে চাচাতো বোন নাদিয়াকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূর থেকেই ইয়াহু ডুডল নোটপ্যাডের মাধ্যমে অঙ্ক শেখাতে শুরু করেন সালমান খান। অল্প অল্প করে তাঁর এ উদ্যোগে 'ফেল্টুশ' চাচাতো বোনটি একসময় অঙ্ক পরীক্ষায় দারুণ ফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল। এ ঘটনার পর অন্য আত্মীয়স্বজনও তাঁদের সন্তানদের অঙ্ক শেখানোর দায়িত্ব দিলেন সালমানের ওপর। হায়! এত শিক্ষার্থীকে অঙ্ক শেখানোর সময় তিনি কিভাবে পাবেন? এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি ভাবতে শুরু করলেন। পেয়েও গেলেন 'আইডিয়া'।
২০০৬ সালের ১৬ নভেম্বরে কম্পিউটারে অঙ্কের ওপর কয়েকটি ভিডিও টিউটরিয়াল তৈরি করে সেগুলো ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে আপলোড করে দিলেন তিনি। ভিডিও দেখেই তাঁর শিক্ষার্থীরা অঙ্ক শিখতে লাগল। ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর পরিকল্পনাটি আরো বিস্তৃত করলেন তিনি। শুধু নিকটাত্মীয় নয়, পৃথিবীর সব শ্রেণীর শিক্ষার্থী যাতে এ ভিডিও দেখে অঙ্ক শিখতে পারে সে উদ্যোগ নিলেন। কাজের ফাঁকে বিভিন্ন 'লেসন'-এর ভিডিও টিউটরিয়াল তৈরি করতে লাগলেন। দিন দিন বাড়তে থাকল তাঁর ভিডিও টিউটরিয়ালের জনপ্রিয়তা। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শক তাঁর ভিডিওগুলো দেখতে শুরু করলেন। ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে ২০০৯ সালের শেষ দিকে ছেড়ে দিলেন চাকরি। এরপর দিনের সম্পূর্ণ সময় তিনি ভিডিও টিউটরিয়াল তৈরির কাজে মন দিলেন।
টিউটরিয়াল কথা
সালমানের তৈরি অনলাইন টিউটরিয়াল প্রতিষ্ঠানে (www.khanacademy.org) বর্তমানে এক হাজার ৮০০-র বেশি ভিডিও টিউটরিয়াল রয়েছে। সাইটটিতে ভিডিওগুলোর মধ্যে রয়েছে বীজগণিত, পাটিগণিত, ব্যাংকিং ও অর্থ, জীববিদ্যা, ব্রেইন টিজার, ক্যালকুলাস, রসায়ন, ক্রেডিট ক্রাইসিস, অর্থনীতি, ডেভেলপমেন্ট ম্যাথ, ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন, ফিনান্স, গিথনার প্ল্যান, জিওমেট্রি, ইতিহাস, লিনিয়ার অ্যালজেবরা, অরগানিক রসায়ন, পলসন বেলআউট, ফিজিকস, প্রি-অ্যালজেবরা, প্রি-ক্যালকুলাস, প্রোবাবলিটি, পরিসংখ্যান, ট্রিগনোমেট্রি, ভ্যালুয়েশন ও ইনভেস্টিং, ভেনচার ক্যাপিটাল ও শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সব ধরনের টিউটরিয়াল। ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো গুগলের ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে আপলোড করে রাখা। আর প্রতিষ্ঠানটির মূল সাইটে পাওয়া যাবে টিউটরিয়ালগুলোর ভিডিও লিংক। খান একাডেমীর সব ভিডিও টিউটরিয়াল পাওয়া যাবে www.youtube.com/user/khanacademy চ্যানেলে। নিজের তৈরি টিউটরিয়ালগুলো সম্পর্কে টিভি চ্যানেল সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালমান খান বলেন, যে উদ্যোগটি আমি গ্রহণ করেছি সেটি বিশ্বব্যাপী সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য ছড়িয়ে দিতে চাই। আমি নিজে যতটুকু করেছি সেটি এ প্রকল্পের ছোট্ট একটি দিক। আমার এ প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি শিক্ষার্থী যেমন শিখতে পারবে, তেমনি কোটি কোটি মানুষ এর সঙ্গে সহজে যুক্তও হতে পারবে।
মুক্ত ভিডিও
খান একাডেমী সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি প্রকল্প। এ প্রকল্প ঘিরে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও অফুরন্ত। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাঁর ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো বাণিজ্যিকীকরণ করার জন্য। কিন্তু সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন সালমান খান। তাঁর সব ভিডিও টিউটরিয়াল তিনি মুক্ত (ওপেনসোর্স) করে দিয়েছেন। বাণিজ্যিকীকরণ করলে টিউটরিয়ালগুলো থেকে তিনি লাখ লাখ ডলার আয় করতে পারতেন জেনেও তা তিনি সহজেই প্রত্যাখ্যান করেছেন! তাঁর ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো ওপেনসোর্স লাইসেন্সের অধীনে থাকায় যে কেউ এগুলো অনলাইন থেকে ডাউনলোড, অন্যকে বিতরণ, অনুবাদ প্রকল্প এবং এগুলো বর্ধিত করতে পারবেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশে এ ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো আঞ্চলিকীকরণ বা সে দেশের নিজস্ব ভাষায় অনুবাদকরণ শুরু হয়ে গেছে।
বিল গেটসের প্রিয় শিক্ষক!
বিল গেটসের পরিচয় নিশ্চয়ই কাউকে নতুন করে দিতে হবে না। বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য এ ব্যক্তির সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষকের নাম কী? এমন প্রশ্নের জবাবে বিল গেটস বলেছেন সালমান খানের নাম! এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, "সালমান খান যে কাজটি করেছেন সেটি সত্যিই 'অ্যামেজিং'! কঠিন কঠিন বিষয়কে তিনি খুব সহজেই তুলে এনেছেন।" বিল গেটস ও তাঁর ১১ বছরের সন্তান এখন নিয়মিত খান একাডেমী থেকে অনলাইনে বীজগণিত ও জীববিদ্যার বিভিন্ন বিষয় শিখছেন। এটি তাঁদের বীজগণিত ও জীববিদ্যা শিখতে অনেক সহযোগিতা করছে। বিল গেটসের ভাষায়, 'সালমান খান যে কাজটি করেছেন সেটি সত্যিই অবিশ্বাস্য!'
অনুবাদ করা যেতে পারে টিউটরিয়াল
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের গণিতে অনেক ভয়। তাদের জন্য টিউটরিয়ালগুলো অনুবাদ বা আঞ্চলিকীকরণ করা যেতে পারে। তাহলে তাদের অঙ্কভীতি দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো ওপেনসোর্স-ভিত্তিক হওয়ায় যেকোনো ভাষায় এটি অনুবাদ করে নিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। টিউটরিয়ালগুলো সহজবোধ্য করার উদ্যোগ নিলে আমাদের শিক্ষার্থীরাও হতে পারবে বিল গেটসের সহপাঠী।
সেরা পাঁচ 'আইডিয়া'
সেরা পাঁচ আইডিয়া'র মধ্যে শিক্ষা বিভাগে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে সালমান খানের 'খান একাডেমী'র (www.khanacademy.org) বিনা মূল্যে শিক্ষামূলক অনলাইন ভিডিও টিউটরিয়াল। এ প্রকল্প আরো এগিয়ে নিতে খান একাডেমীকে ২০ লাখ ডলার বা ১৪ কোটি টাকা পুরস্কার দিয়েছে গুগল। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান ও গণিত প্রতিযোগিতা দলকে (www.usfirst.org) 'রিয়েল ওয়ার্ল্ড ওয়ার্কিং এক্সপেরিয়েন্স' ধারণা দেওয়ার জন্য ৩০ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে। সরকারের সব কাজকে একেবারেই স্বচ্ছ করার জন্য http://public.resource.org ধারণাকেও দেওয়া হয়েছে ২০ লাখ ডলার পুরস্কার। গাড়ি চালানোতে নতুন প্রযুক্তির 'আইডিয়া' দেওয়ার জন্য http://shweeb.com প্রকল্পকে দেওয়া হয়েছে ১০ লাখ ডলার। আর আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে নতুন ধরনের আইডিয়া দেওয়ার জন্য ২০ লাখ ডলার পুরস্কার পেয়েছে এইমস নামের( www.aims.ac.ya) একটি প্রকল্প।
একজন সালমান খান
সালমানের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার নিউ অর্লিয়ন্স শহরে। তাঁর দাদাবাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে। অনেক আগেই সালমানের বাবা অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। যুক্তরাষ্ট্রেই বেড়ে ওঠেন সালমান। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব আইটি (এমআইটি) থেকে গণিত, তড়িৎ কৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান_এ তিন বিষয়েই স্নাতক করেন তিনি। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ কৌশলে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এখানেই থেমে থাকেনি তাঁর শিক্ষাজীবন। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে ব্যবসায় প্রশাসন থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এ মেধাবী।
তাঁর অনলাইন অঙ্ক শেখার টিউটরিয়াল সাইট www.khanacademy.org ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করলেও ২০০৯ সালের শেষ দিক থেকে তিনি এতে পরিপূর্ণ সময় দিতে শুরু করেন। এ পর্যন্ত খান একাডেমীর ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিও টিউটরিয়াল দেখা হয়েছে আড়াই কোটিরও বেশি বার! আর এ ইউটিউব চ্যানেলটির স্থায়ী দর্শকসংখ্যা ৭৫ হাজারের বেশি!
খান একাডেমীর বেড়ে ওঠা
২০০৪ সালের শেষ দিকে চাচাতো বোন নাদিয়াকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূর থেকেই ইয়াহু ডুডল নোটপ্যাডের মাধ্যমে অঙ্ক শেখাতে শুরু করেন সালমান খান। অল্প অল্প করে তাঁর এ উদ্যোগে 'ফেল্টুশ' চাচাতো বোনটি একসময় অঙ্ক পরীক্ষায় দারুণ ফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল। এ ঘটনার পর অন্য আত্মীয়স্বজনও তাঁদের সন্তানদের অঙ্ক শেখানোর দায়িত্ব দিলেন সালমানের ওপর। হায়! এত শিক্ষার্থীকে অঙ্ক শেখানোর সময় তিনি কিভাবে পাবেন? এ সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি ভাবতে শুরু করলেন। পেয়েও গেলেন 'আইডিয়া'।
২০০৬ সালের ১৬ নভেম্বরে কম্পিউটারে অঙ্কের ওপর কয়েকটি ভিডিও টিউটরিয়াল তৈরি করে সেগুলো ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে আপলোড করে দিলেন তিনি। ভিডিও দেখেই তাঁর শিক্ষার্থীরা অঙ্ক শিখতে লাগল। ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর পরিকল্পনাটি আরো বিস্তৃত করলেন তিনি। শুধু নিকটাত্মীয় নয়, পৃথিবীর সব শ্রেণীর শিক্ষার্থী যাতে এ ভিডিও দেখে অঙ্ক শিখতে পারে সে উদ্যোগ নিলেন। কাজের ফাঁকে বিভিন্ন 'লেসন'-এর ভিডিও টিউটরিয়াল তৈরি করতে লাগলেন। দিন দিন বাড়তে থাকল তাঁর ভিডিও টিউটরিয়ালের জনপ্রিয়তা। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শক তাঁর ভিডিওগুলো দেখতে শুরু করলেন। ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে ২০০৯ সালের শেষ দিকে ছেড়ে দিলেন চাকরি। এরপর দিনের সম্পূর্ণ সময় তিনি ভিডিও টিউটরিয়াল তৈরির কাজে মন দিলেন।
টিউটরিয়াল কথা
সালমানের তৈরি অনলাইন টিউটরিয়াল প্রতিষ্ঠানে (www.khanacademy.org) বর্তমানে এক হাজার ৮০০-র বেশি ভিডিও টিউটরিয়াল রয়েছে। সাইটটিতে ভিডিওগুলোর মধ্যে রয়েছে বীজগণিত, পাটিগণিত, ব্যাংকিং ও অর্থ, জীববিদ্যা, ব্রেইন টিজার, ক্যালকুলাস, রসায়ন, ক্রেডিট ক্রাইসিস, অর্থনীতি, ডেভেলপমেন্ট ম্যাথ, ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন, ফিনান্স, গিথনার প্ল্যান, জিওমেট্রি, ইতিহাস, লিনিয়ার অ্যালজেবরা, অরগানিক রসায়ন, পলসন বেলআউট, ফিজিকস, প্রি-অ্যালজেবরা, প্রি-ক্যালকুলাস, প্রোবাবলিটি, পরিসংখ্যান, ট্রিগনোমেট্রি, ভ্যালুয়েশন ও ইনভেস্টিং, ভেনচার ক্যাপিটাল ও শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সব ধরনের টিউটরিয়াল। ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো গুগলের ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে আপলোড করে রাখা। আর প্রতিষ্ঠানটির মূল সাইটে পাওয়া যাবে টিউটরিয়ালগুলোর ভিডিও লিংক। খান একাডেমীর সব ভিডিও টিউটরিয়াল পাওয়া যাবে www.youtube.com/user/khanacademy চ্যানেলে। নিজের তৈরি টিউটরিয়ালগুলো সম্পর্কে টিভি চ্যানেল সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সালমান খান বলেন, যে উদ্যোগটি আমি গ্রহণ করেছি সেটি বিশ্বব্যাপী সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য ছড়িয়ে দিতে চাই। আমি নিজে যতটুকু করেছি সেটি এ প্রকল্পের ছোট্ট একটি দিক। আমার এ প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি শিক্ষার্থী যেমন শিখতে পারবে, তেমনি কোটি কোটি মানুষ এর সঙ্গে সহজে যুক্তও হতে পারবে।
মুক্ত ভিডিও
খান একাডেমী সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি প্রকল্প। এ প্রকল্প ঘিরে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও অফুরন্ত। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাঁর ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো বাণিজ্যিকীকরণ করার জন্য। কিন্তু সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন সালমান খান। তাঁর সব ভিডিও টিউটরিয়াল তিনি মুক্ত (ওপেনসোর্স) করে দিয়েছেন। বাণিজ্যিকীকরণ করলে টিউটরিয়ালগুলো থেকে তিনি লাখ লাখ ডলার আয় করতে পারতেন জেনেও তা তিনি সহজেই প্রত্যাখ্যান করেছেন! তাঁর ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো ওপেনসোর্স লাইসেন্সের অধীনে থাকায় যে কেউ এগুলো অনলাইন থেকে ডাউনলোড, অন্যকে বিতরণ, অনুবাদ প্রকল্প এবং এগুলো বর্ধিত করতে পারবেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশে এ ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো আঞ্চলিকীকরণ বা সে দেশের নিজস্ব ভাষায় অনুবাদকরণ শুরু হয়ে গেছে।
বিল গেটসের প্রিয় শিক্ষক!
বিল গেটসের পরিচয় নিশ্চয়ই কাউকে নতুন করে দিতে হবে না। বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য এ ব্যক্তির সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষকের নাম কী? এমন প্রশ্নের জবাবে বিল গেটস বলেছেন সালমান খানের নাম! এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, "সালমান খান যে কাজটি করেছেন সেটি সত্যিই 'অ্যামেজিং'! কঠিন কঠিন বিষয়কে তিনি খুব সহজেই তুলে এনেছেন।" বিল গেটস ও তাঁর ১১ বছরের সন্তান এখন নিয়মিত খান একাডেমী থেকে অনলাইনে বীজগণিত ও জীববিদ্যার বিভিন্ন বিষয় শিখছেন। এটি তাঁদের বীজগণিত ও জীববিদ্যা শিখতে অনেক সহযোগিতা করছে। বিল গেটসের ভাষায়, 'সালমান খান যে কাজটি করেছেন সেটি সত্যিই অবিশ্বাস্য!'
অনুবাদ করা যেতে পারে টিউটরিয়াল
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের গণিতে অনেক ভয়। তাদের জন্য টিউটরিয়ালগুলো অনুবাদ বা আঞ্চলিকীকরণ করা যেতে পারে। তাহলে তাদের অঙ্কভীতি দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ভিডিও টিউটরিয়ালগুলো ওপেনসোর্স-ভিত্তিক হওয়ায় যেকোনো ভাষায় এটি অনুবাদ করে নিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। টিউটরিয়ালগুলো সহজবোধ্য করার উদ্যোগ নিলে আমাদের শিক্ষার্থীরাও হতে পারবে বিল গেটসের সহপাঠী।
No comments:
Post a Comment