Saturday, September 25, 2010

সার ও জ্বালানি যখন মলমূত্র

সার ও জ্বালানি যখন মলমূত্র


মানুষের মল, মূত্র এবং শরীরের ঘামেরও দাম আছে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের চলমান গবেষণার প্রাথমিক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো বিশাল জনবসতিসম্পন্ন রাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মলমূত্র সংরক্ষণের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি পেলে বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা থেকে শুরু করে বিরাটসংখ্যক শিশুর ডায়রিয়ায় মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সার এবং জ্বালানি হিসেবে এসব মলমূত্র ব্যবহার করা হবে বলে গবেষকরা আশা করছেন। তবে এখনই সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এ সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে বড় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের পক্ষে ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী এ গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশের প্রায় আড়াই বিলিয়ন মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করেন খোলা মাঠে, জঙ্গলে অথবা রাস্তার পাশে। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ঠিক তেমনিভাবে পরিবেশ দূষণের কারণ। গবেষকরা জানান, এছাড়া শহরাঞ্চলের আরও ২.১ বিলিয়ন মানুষ পাকা অথবা আধা পাকা পায়খানা-প্রস্রাবখানা ব্যবহার করেন, সেগুলোও যথাযথভাবে সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অর্থাত্ সেসব মলমূত্রকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ধ্বংসের কোনো পন্থা অবলম্বন করা হয়নি। ফলে তা রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে।
প্রতি বছর ১৬ লাখ শিশু মারা যাচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা-প্রস্রাবখানা ব্যবহার না করার কারণে। শুধু তাই নয়, নিকটস্থ পানি সরবরাহ লাইন অথবা খাবার পানি সরবরাহের স্তরেও বিস্তৃত হচ্ছে এসব মলমূত্রের নির্যাস। স্যানিটেশন সার্ভিস যদি সত্যিকার অর্থে নিরাপদ করা সম্ভব হয় তাহলে ডায়রিয়া রোগের প্রকোপ ২০ থেকে ৪০ ভাগ হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে মহিলা ও বালিকারাও প্রাইভেসি বজায় রেখে পর্দানশিনভাবে মলমূত্র ত্যাগের সুযোগ পাবেন।
গবেষকরা আশা করছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তা অথবা জনবসতি রয়েছে এমন এলাকায় মলমূত্র ত্যাগের জন্য স্বল্প ব্যয়ে টয়লেট অথবা পায়খানা তৈরির অনুমতি পাবেন সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে। এরপর তারা ওই কর্মসূচিকে জনপ্রিয় করতে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা চালাবেন। টয়লেটগুলো ভরে গেলে মলমূত্র সরিয়ে নেয়া হবে নির্দিষ্ট একটি স্থানে, যা পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হবে না। এরপর এমনভাবে সেগুলো সংরক্ষণ করা হবে যা ক্ষেত-খামারে সার হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী হতে পারে অথবা জ্বালানি কিংবা শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত হতে পারে।
গবেষকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাই-ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশী-আমেরিকান আতিকুর রহমান এরই মধ্যে ফ্লোরিডা থেকে ঢাকায় এসেছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনার পর তিনি বাংলাদেশে কাজ শুরু করতে চান। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশের ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া এ উদ্যোগ সাফল্যমণ্ডিত করা সম্ভব নয় বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিল গেটস ফাউন্ডেশন থেকে আর্থিক সহায়তা নেয়ার তেমন প্রয়োজন হবে না যদি বাংলাদেশ সরকার এ পরিকল্পনাকে লুফে নেয়। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এরই মধ্যে মলমূত্র সংরক্ষণের প্রকল্প চালু হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, টয়লেটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এলাকাভিত্তিক পাহারাদার নিয়োগ করা হবে। সেসব অসামাজিক কাজের জন্য কিংবা অপরাধীদের আস্তানা হিসেবে কেউ যাতে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যবস্থাও করা হবে।
সূত্র : এনা।

No comments:

Post a Comment